পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে । ᏩᏄᏕ বিশ্বাসী সে কথা মানতে রাজি আছি, কিন্তু তাই বলেই যে চুরি করতে পারে না তা বলা যায় না। এও দেখেছি পঁচিশ বৎসর যে লোক বিশ্বাস রক্ষা করে এসেছে সেও একদিন হঠাৎ— তা যদি হয়। আমি ওকে জেলে দিতে পারব না। আপনি দেবেন কেন ? যার হাতে দেবার ভার সেই দেবে । , কাসেম ছ হাজার টাকা নিয়ে বাকি টাকাটা ফেলে রাখলে কেন ? ঐ ধোকাটা মনে জন্মে দেবার জন্যেই। আপনি যাই বলুন, লোকটা পাকা। ও আপনাদের . কাছারিতে পাহারা দেয়, এ দিকে কাছাকাছি এ অঞ্চলে যত চুরি ডাকাতি হয়েছে নিশ্চয় তার মূলে ও আছে । লাঠিয়ালরা পঁচিশ ত্রিশ মাইল দূরে ডাকাতি সেরে এক রাত্রেই কেমন করে ফিরে এসে মনিবের কাছারিতে হাজরি লেখাতে পারে ইনসপেক্টর তার অনেক দৃষ্টান্ত দেখালেন। আমি জিজ্ঞাসা করলুম, কাসেমকে এনেছেন ? তিনি বললেন, না সে থানায় আছে, এখনই ডেপুটিবাবু তদন্ত করতে আসবেন। আমি বললুম, আমি তাকে দেখতে চাই। কাসেমের সঙ্গে দেখা হবামাত্র সে আমার পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে বললে, খোদার কসম, মহারাজ, আমি এ কাজ করি নি । আমি বললুম, কাসেম, আমি তোমাকে সন্দেহ করি নে। ভয় নেই তোমার, বিনা দোষে তোমার শান্তি ঘটতে দেব না । কাসেম ডাকাতদের ভালো বর্ণনা করতে পারলে না ; কেবল খুবই অত্যক্তি করতে লািগল— চার-শো পাঁচ-শো লোক, এত-বড়ো-বড়ো বন্দুক-তলোয়ার ইত্যাদি। বুঝলুম। এ-সমস্ত বাজে কথা ; হয় ভয়ের দৃষ্টিতে সব বেড়ে উঠেছে নয় পরাভবের লজ্জা চাপা দেবার জন্যে বাড়িয়ে তুলেছে। ওর ধারণা, হরিশ কুণ্ডুর সঙ্গে আমার শক্ৰতা, এ তারই কাজ, এমন-কি, তাদের এক্রাম সর্দারের গলার আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে বলে তার বিশ্বাস । আমি বললুম, দেখা কাসেম, আন্দাজের উপর ভর করে খবরদার পরের নাম জড়াস নে । হরিশ কুণ্ডু এর মধ্যে আছে কি না সে কথা বানিয়ে তোেলবার ভার তোর উপর নেই। বাড়ি ফিরে এসে মাস্টােমশায়কে ডেকে পাঠলুম। তিনি মাথা নেড়ে বললেন, আর কল্যাণ নেই। ধর্মকে সরিয়ে দিয়ে দেশকে তার জায়গায় বসিয়েছি, এখন দেশের সমস্ত পাপ উদ্ধত হয়ে ফুটে বেরোবে, তার আর কোনো লজ্জা থাকবে না । আপনি কি মনে করেন, এ কাজআমি জানি নে, কিন্তু পাপের হাওয়া উঠেছে। দাও, দাও, তোমার এলেকা থেকে ওদের এখনই বিদায় করে দাও । আর একদিন সময় দিয়েছি, পরশু এরা সব যাবে । 睦 দেখো, আমি একটি কথা বলি, বিমলাকে তুমি কলকাতায় নিয়ে যাও। এখান থেকে তিনি বাইরেটাকে সংকীর্ণ করে দেখছেন, সব মানুষের সব জিনিসের ঠিক পরিমাণ বুঝতে পারছেন না। ওঁকে তুমি একবার পৃথিবীটা দেখিয়ে দাও ; মানুষকে, মানুষের কর্মক্ষেত্ৰকে, উনি একবার বড়ো জায়গা থেকে দেখে নিন। R আমিও ঐ কথাই ভাবছিলুম। কিন্তু আর দেরি কোরো না। দেখো নিখিল, মানুষের ইতিহাস পৃথিবীর সমস্ত দেশকে সমস্ত জাতকে নিয়ে তৈরি হয়ে উঠছে, এইজন্যে পলিটিক্সেও ধর্মকে বিকিয়ে দেশকে বাড়িয়ে তোলা চলবে না। আমি জানি যুরোপ এ কথা মনের সঙ্গে মানে না, কিন্তু তাই বলেই যে যুরোপই আমাদের গুরু এ আমি মানব না। সত্যের জন্যে মানুষ মরে অমর হয়, কোনাে জাতিও যদি মরে তা হলে মানুষের