পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যঙ্গকৌতুক やりOO দেখা যাউক, চীন-পরিব্রাজক নিনফু বোধনাচার্য সম্বন্ধে কী বলেন। দুৰ্ভাগ্যক্রমে কিছুই বলেন না। আমরা আরব-ভ্ৰমণকারী আলকরীম, পরটুগীজ ভ্ৰমণকারী গঞ্জলিস ও গ্ৰীক দার্শনিক ম্যাকভীমসের সমস্ত গ্ৰন্থ অনুসন্ধান করিলাম। প্রথমত ইহাদের তিনজনের ভ্ৰমণকাল নির্ণয় করা ঐতিহাসিকের কর্তব্য । আমরাও তাঁহাতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু প্ৰবন্ধ-সংক্ষেপের উদ্দেশ্যে তৎপূর্বে বলা আবশ্যক যে, উক্ত তিন ভ্ৰমণকারীর কোনো রচনায় বোধনাচার্য অথবা উতঙ্কসূরির কোনো উল্লেখ নাই। নিনফুর গ্রন্থে হ্রাও-কে —নামক এক ব্যক্তির নির্দেশ আছে। পুরাতত্ত্ববিদমাত্রেই হ্রাও-কে নাম বোধনাচার্য নামের চৈনিক অপভ্রংশ বলিয়া স্পষ্টই বুঝিতে পরিবেন । কিন্তু হ্রাও-কে বোধনাচাৰ্যও হইতে পারে, শম্বরদত্ত হইতেও আটক নাই | অতএব পুরন্দরসেন একজন ছিলেন কি অনেক জন ছিলেন কি ছিলেন না, প্রথমত, তাহার কোনো প্রমাণ নাই। দ্বিতীয়ত, উক্ত সংশয়াপন্ন পুরন্দরাসেনের সহিত কীট্টকভট্ট অথবা পুণ্ডবর্ধন মিশ্রের কোনো যোগ ছিল কি না ছিল, তাহা নির্ণয় করা কাহারও সাধা নহে । অতএব, উক্ত কীট্টকভট্ট ও পুণ্ডবর্ধন মিশ্রের রচিত মোহান্তক ও জ্ঞানাঞ্জন –নামক গ্রন্থে যদি গ্যালভানিক ব্যাটারি ও অক্সিজেন বাম্পের কোনো উল্লেখ না পাওয়া যায়, তবে তাহা হইতে কী প্রমাণ হয় বলা শক্ত ! শুদ্ধ এই পর্যন্ত বলা যায় যে, উক্ত পণ্ডিতদ্বয়ের সময়ে গ্যালভানিক ব্যাটারি ও অক্সিজেন আবিষ্কৃত হয় নাই । কিন্তু সে সময়টা কী তাহা আমি অনুমান করিলে মধুসূদন শাস্ত্রীমহাশয় প্রতিবাদ করবেন এবং তিনি অনুমান করিলে আমি প্রতিবাদ করিব, তাহাতে সন্দেহ নাই । অতএব কীট্টক ও পুণ্ডবর্ধনের নিকট এইখানে বিদায় লইতে হইল । তাঁহাদের সম্বন্ধে আলোচনা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত হইল, এজন পাঠকদিগের নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করি । কিন্তু তাহাদিগকে বিবেচনা করিয়া দেখিতে হইবে যে, প্রথমত নন্দ উপনন্দ আনন্দ বোমপাল ক্ষেমপাল অনঙ্গপাল প্রভৃতি আঠারো জন নৃপতির কাল ও বংশাবলী -নিৰ্ণয় সম্বন্ধে মধুসূদন শাস্ত্রার মত খণ্ডন করিয়া সোমদেব চৌলিকভট্ট শঙ্কর কৃপানন্দ উপমনু প্রভৃতি পণ্ডিতের জীবিতকাল নির্ধারণ করিতে হইবে ; তাহার পর তাহাদের রচিত বোধপ্ৰদীপ আনন্দসরিৎ মুগ্ধচৈতন্যলহরী প্রভৃতি পঞ্চান্নখানি গ্রন্থের জীর্ণাবশেষ আলোচনা করিয়া দেখাইব, উহাদের মধ্যে কোনো গ্রন্থেই গ্যালভানিক ব্যাটারি অথবা অক্সিজেনের নামগন্ধ নাই | উক্ত গ্রন্থসমূহে যাটচক্রভেদ সাপদংশনমন্ত্র রক্ষাবীজ আছে এবং একজন পণ্ডিত এমনও মত বাস্তু করিয়াছেন যে, স্বপ্নে নিজের লাঙ্গুল দর্শন করিলে ব্ৰাহ্মণকে ভূমিদান ও কুণ্ডপতনক-নামক চাতুমসা ব্ৰতপালন আবশ্যক ; কিন্তু বাটারি ও বাষ্প বিষয়ে কোনো বর্ণনা বা বিধান পাওয়া গেল না । আমরা ক্রমশ ইহার বিস্তারিত সমালোচনা করিয়া ইতিহাসহীনতা সম্বন্ধে ভারতের দুর্নােম দূর করিব ; প্রাচীন গ্রন্থ হইতেই স্পষ্ট প্রমাণ করিয়া দিব যে, পুরাকালে গালভানিক ব্যাটারি ভারতখণ্ডে ছিল না। এবং সংস্কৃত ভাষায় অক্সিজেন বাষ্পের কোনো নাম পাওয়া যায় না । ܔ মধুসূদন শাস্ত্রীমহাশয় -কর্তৃক উক্ত প্রবন্ধের প্রতিবাদ আমাদের ভারত-ইতিহাস-সমুদ্রে পাতিহাস, বঙ্গসাহিতাকুঞ্জের গুঞ্জোন্মত্ত কুঞ্জবিহারীবাবু কলম ধরিয়াছেন ; অতএব প্রাচীন ভারত, সাবধান ! কোথায় খোচা লাগে কী জানি । আপোগণ্ডের যদি কাণ্ডজ্ঞান থাকিবে তবে নিজের সুধাভাণ্ডে দণ্ডপ্রহার করিতে প্রবৃত্তি হইবে কেন ! অথবা বহুদশী প্রাচীন ভারতকে সাবধান করা বাহুল্য, উদ্যত লেখনী কুঞ্জবিহারীকে দেখিয়া তিনি পবিত্র উত্তরায়ে সর্বাঙ্গ আবৃত ব্যাটারি এবং অক্সিজেনের সংস্কৃত নাম খুঁজিয়া পাইলেন না। ধন্য র্তাহার স্বদেশহিতৈষিতা ! আমাদের দেশে যে এক কালে গ্যালভানিক ব্যাটারি এবং অক্সিজেন বাষ্প আবিষ্কৃত হইয়াছিল, ভাই বাঙালি, এ কথা তুমি বিশ্বাস করিবে কেন ? তাহা হইলে তোমার এমন দশা হইবে কেন ? আজি যে তুমি লাঞ্ছিত, গঞ্জিত, তিরস্কৃত, পরপদানত, অন্নবস্ত্ৰহীন, দাসানুদাস ভিক্ষুক, জগতে তোমার এমন