পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"のW。 রবীন্দ্র-রচনাবলী নাই এবং আজ একেবারেই বােঝা না, তুমি কী করিয়া বুঝিবে কেন করি! তবু জিজ্ঞাসা করিবে কেন করি ? আমি যে ভাই, তোমাদের মিল পড়ি নাই, তোমাদের স্পেন্সর পড়ি নাই, তোমাদের ডারুয়িন পড়ি নাই ; আমি যে ভাই, তোমাদের হকসলি এবং টিণ্ডাল, রাস্কিন এবং কার্লাইল পড়ি নাই এবং পড়িয়া বুঝিতে পারি নাই ; আমি যে ভাই, কেবলমাত্র ষড়দর্শন এবং অষ্টাঙ্গ বেদ, সংহিতা এবং পুরাণ, আগম এবং নিগম, উপক্ৰমণিকা এবং ঋজুপাঠ্য-প্রথমভাগ পড়িয়াছি- ঐ-সকল গ্রন্থ এই পতিত ভারতে আমি ছাড়া আর যে কেহ পড়ে নাই এবং বুঝে নাই ভাই । তবু আবার জিজ্ঞাসা করিবে কেন করি ! প্ৰাণের ভাইসকল, আমি যে পাগল, বাতুল, উন্মাদ, বায়ুগ্ৰস্ত, আমার মাথার ঠিক নাই, বুদ্ধির ভাই বাঙালি, এখন বুঝিলে কি, কেন করি, অবোধ অশ্রু কেন পড়ে, পোড়া চােখের জল কেন বারণ মানে না, কেন মিছে অরণ্যে রোদন, অস্থানে ক্ৰন্দন করিয়া মারি । নীরব হৃদয়ের জ্বালা ব্যক্তি হইল কি, এই ভস্মীভূত প্ৰাণের শিখা দেখিতে পাইলে কি, শুষ্ক অশ্রুধারা দুই কপোল বাহিয়া কি প্রবাহিত হইল ? যে ধ্বনি কখনো শোন নাই তাহার প্রতিধ্বনি শুনিলে কি, যে আশা কখনো হৃদয়ে স্থান দাও নাই তাহার নৈরাশা তিলমাত্র অনুভব করিলে কি, যাহা বুঝাইতে গেলে বুঝানো যায় না এবং যাহা বুঝিতে চেষ্টা করিলে বুঝা উত্তরোত্তর অসাধ্য হইয়া উঠে তাহা কি আজ তোমাদের এই উনবিংশ শতাব্দীর সভ্যতারুদ্ধ বধির কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল।— সম্পাদক মহাশয়, আজ এই পর্যন্ত প্ৰকাশ করা গেল । কারণ, ইহার পরের প্যারাগ্রাফেই আমাদের মুখ বন্ধ করিলাম, তবে আমি আর একটি কথাও কহিব না— না, একটিও না ।” এই বলিয়া কেন কথা কহিবেন না, শ্মশানক্ষেত্রে কথা বলিলেই বা কিরূপ ফল হয় এবং সমাধিক্ষেত্রে কথা বলিলেই বা কিরূপ নিম্বফল হয়, এবং কথা বলিলেই বা কিরূপ হৃদয় বিদীর্ণ হয় এবং হৃদয় বিদীর্ণ হইলেই বা কিরূপ কথা বাহির হইতে থাকে, তাহাই ভাই বাঙালিকে পুনরায় বুঝাইতে প্ৰবৃত্ত হইয়াছেন এবং কিছুতেই কৃতকার্য হইতে পারিতেছেন না। এই অংশটি এত দীর্ঘ যে আপনার কাগজে স্থান হইবে না। পাঠকদিগকে আশ্বাস দেওয়া যাইতেছে, প্ৰবন্ধটি অবিলম্বে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হইবে । মূল্য ৫৭০ মাত্র, কিন্তু র্যাহারা ডাক-মাশুল -স্বরূপে উক্ত ৫৭০ পাঠাইবেন তাহাদিগকে বিনা মূল্যে গ্ৰন্থ উপহার দেওয়া যাইবে । --সাহিত্য এজেন্সির কার্যাধ্যক্ষ নাটক সম্পাদকমহাশয়, আজকাল বাংলা সাহিত্যে রাশি রাশি নাটক-নভেলের আমদানি হইতেছে। কিন্তু তাহাতে সার পদার্থ কিছুমাত্র নাই। না আছে তত্ত্বজ্ঞান, না আছে উপদেশ। কী করিলে দেশের ধনবৃদ্ধি হইতে পারে, গোজাতির রোগনিবারণ করিবার কী কী উপায় আছে, দ্বৈত দ্বৈতাদ্বৈত এবং শুদ্ধাদ্বৈতবাদের মধ্যে কোন বাদ শ্রেষ্ঠ, কফ, পিত্ত ও বায়ু-বৃদ্ধির পক্ষে দিশি কুমড়া ও বিলাতি কুমড়ার মধ্যে কোনো প্রভেদ আছে কি না, অশোক এবং হর্ষবর্ধনের মধ্যে কে আগে কে পরে— আমাদের অগণ্য কাব্য-নাটকের মধ্যে এ-সকল সারগর্ভ বিশ্বহিতকর প্রসঙ্গের কোনো মীমাংসা পাওয়া যায় না । একবার কল্পনা করিয়া দেখুন, যদি কোনো নাটকের পঞ্চমাঙ্কের সর্বশেষভাগে এমন একটি তত্ত্ব পাওয়া যায় যদ্বারা জৈবশক্তি ও দৈবশক্তির অন্যোন্য সম্বন্ধ নিরূপিত হয় অথবা সৃষ্টিবিকাশের ক্রমপর্যায় নাটকের অঙ্কে অঙ্কে বিভক্ত