পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যঙ্গকৌতুক । Vedve পাকা হইয়াছ, কিন্তু তখন যে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না ; একেবারে সমস্তই মন হইতে গড়িতে হইয়াছিল। তৎপূর্বে তোমরা যদি একটু মনােযোগ করিয়া জন্মগ্রহণ করিতে তাহা হইলে সমালোচনা শুনিয়া অনেক জ্ঞানলাভ করিতাম, একটা মস্ত স্ট্যাণ্ডার্ড পাওয়া যাইত। দূৰ্ভাগ্যক্রমে তোমরা বড়োই বিলম্বে জন্মিায়াছ। যাহা হউক, যখন দ্বিতীয় সংস্করণ আরম্ভ হইবে তখন তোমাদের কথা স্মরণ রাখিব । “আবার কেহ কেহ, রচনা দুটাে যে আমার তাহা একেবারে অস্বীকার করে। হয়তো অনায়াসে প্রমাণ করিতে পারিত ওটা তাহাদেরই নিজের, কিন্তু তাহা হইলে তাঁহাদের কল্পনাশক্তি ও প্রতিভার | খৰ্বতা স্বীকার করা হয় বলিয়া ক্ষান্ত আছে। হরি হরি ! এই দীর্ঘজীবনে ঐ দুটাে বৈ আর কোনাে দুষ্কর্ম করি নাই, ইহাতেই এত কথা শুনিতে হইল। " ',兽 “যাহা হউক এ তো গেল আমার আক্ষেপের কথা। কিন্তু তোমরা কী মনোদুঃখে, মর্তলোকের প্রতি কী অভিমানে তোমাদের বহুকালের পদ পরিত্যাগ করিতে প্ৰবৃত্ত হইয়াছ ? তখন দেবতারা কেহ বা বৈদিক, কেহ বা পৌরাণিক ভাষায়, কেহ বা ক্রিটুভ, কেহ বা অনুষ্টুভ ছন্দে, দন্ত্য ন মুর্ধন্য ণ অন্তঃস্থ ব বগীয় ব এবং তিন সয়ের উচ্চারণ রক্ষা করিয়া বলিলেন, “ভগবন, সায়ান্স-নামক একটা দানব অত্যন্ত জুলুম আরম্ভ করিয়াছে। ইহার নিকট বৃত্র প্রভৃতি প্রাচীন । অসুরদিগকে গণ্যই করি না।” । । বৃদ্ধ পিতামহ মনে মনে হাসিলেন ; ভাবিলেন, কোনোমতে মানে মানে তাহার হাত হইতে উদ্ধার পাইয়াছ, এখন তাহাকে গণ্য না করিলেও চলে। কিন্তু তখন যে নাকালটা হইয়াছিলে সে বেশ মনে আছে । কিন্তু সে কথা আর উত্থাপন না করিয়া গভীরভাবে চারিটি মস্তক নাড়িয়া কহিলেন, “অবশ্য অবশ্য ।” সুরগুরু বৃহস্পতি কহিলেন, “আৰ্য, শক্রটাকে তত ডরাই না, কিন্তু মিত্রদের উপদ্রবে অতিষ্ঠা হইয়াছি। এতদিন আমরা ছিলাম মানুষের হৃদয়লোকে বিশ্বাসের স্বৰ্গধামে ; এখন তাহারা সায়ন্সের সহিত গোপনে সন্ধিস্থাপনপূর্বক সেখান হইতে নির্বাসিত করিয়া আমাদিগকে মাথার খুলির এক কোণে অত্যন্ত শুষ্ক সংকীর্ণ জায়গায় একটুখানি স্থান দিতে চায়। সেখানে একফোটা বিশ্বাসের অমৃত নাই। বলে, দেখো, তোমাদের কত গীেরব বাড়িল ৷ ছিলে অজ্ঞানান্ধ হৃদয়গহবরে, এখন উঠিলে মস্তিষ্কমৃতজ্বলিত জ্ঞানালোকিত মস্তকচুড়ায়। ভাগ্যে আমরা কয়জনা বুদ্ধিমান ছিলাম, নতুবা স্বর্গে মর্তে কোথাও তোমাদের স্থান হইত না। আমরা সকলের কাছে প্রমাণ করিয়াছি যে, তোমরা আর কোথাও যদি না থাক, নিদেন আমাদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মধ্যে আছ। প্রতিবাদ করিয়া সেখান হইতে তোমাদিগকে বিচলিত করে এমন বুদ্ধিমান এখনাে কেহ জন্মগ্রহণ করে নাই। বিষ্ণুর মীন কুর্ম উদ্ধারের জন্য আমরা এত প্ৰাণপণ চেষ্টা করিতেছি । ‘ভগবন, যথার্থ আন্তরিক ভক্তি কখনােই নিজের দেবতাকে লইয়া এরূপ ছেলে ভুলাইবার চেষ্টা করে না। দেব চতুরানন, এতকাল দেবতা ছিলাম, কেবল মাঝে মাঝে দৈত্যদের উপদ্রবে স্বৰ্গছাড়া হইয়াছি, কিন্তু এ পর্যন্ত আমাদিগকে কেহ এভোল্যুশন থিওরি করিয়া দেয় নাই। প্ৰভু, তুমি যদি, আমাদিগকে সৃষ্টি করিয়া থাক তুমি জান আমরা কী, কিন্তু আজকাল তোমার অপেক্ষা যাহারা কিঞ্চিৎ বেশি শিখিয়াছে তাহাদের হাত হইতে আমাদিগকে রক্ষা করো। বড়ো আশা দিয়াছিলে তোমার দেবতারা অমর, কিন্তু এইভাবে যদি কিছুদিন চলে, আমাদের মানববন্ধুরা যদি সাংঘাতিক স্নেহভরে আরো কিছুকাল আমাদের ব্যাখ্যা করিতে থাকেন, তবে সে আশা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হইবে।” । বৃহস্পতির মুখে এই সমস্ত সংবাদ শ্রবণ করিয়া পিতামহ ব্ৰহ্মা আর উত্তর করিতে পারিলেন না, চারিটি শুভ্র মস্তক নত করিয়া চিন্তিতভাবে বসিয়া রহিলেন । তখন দেবতাগণ স্বস্ব পদ সম্বন্ধে পরিবর্তন প্রার্থনা করিলেন। বিজ্ঞ দেবতা প্রজাপতি এবং বালক কিঞ্চিৎ কর্তৃত্ব ছিল; সেজন্য আমাদের কোনােরূপ নিয়মিত নৈবেদ্য অথবা উপরি-পাওনা ছিল না