পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য Ꮤ2ᏄᎩ . নিকট খাতি অর্জন করাকে আপন চেষ্টার অযােগ বােধ করেন না। প্রথমে যখন ইংরাজি শিক্ষার প্রবাহ আমাদের সমাজে আসিয়া উপস্থিত হইল। তখন কেবল বিলাতি বিদ্যার একটা বালির চর বাধিয়া দিয়াছিল; সে বালুকারাশি পরস্পর অসংসজ ; তাহার উপরে না আমাদের স্থায়ী বাসস্থান নির্মাণ করা যায়, না তাহা সাধারণের প্রাণধারণযোগ্য শস্য উৎপাদন করিতে পারে। অবশেষে তাহারই উপরে যখন বঙ্গসাহিত্যের পলিমৃত্তিকা পড়িল তখন যে কেবল দৃঢ় তাঁট বাধিয়া গেল, তখন যে কেবল বাংলার বিচ্ছিন্ন মানবেরা এক হইবার উপক্ৰম করিল তাঁহা নহে, তখন বাংলা হৃদয়ের চিরকালের খাদ্য এবং আশ্রয়ের উপায় হইল। এখন এই জীবনশালিনী জীবনদায়িনী মাতৃভাষা সন্তানসমাজে আপনি অধিকার প্রার্থনা করিতেছে। সেইজন্যই আজ উপযুক্ত কালে এক সময়ােচিত আন্দােলন স্বতই উদ্ভূত হইয়াছে। কথা উঠিয়াছে, আমাদের বিদ্যালয়ে অধিকতর পরিমাণে বাংলা শিক্ষা প্রচলিত হওয়া আবশ্যক । কেন আবশ্যক ? কারণ, শিক্ষাদ্বারা আমাদের হৃদয়ে যে আকাঙক্ষা যে অভাবের সৃষ্টি হইয়াছে বাংলা ভাষা ব্যতীত তাহা পূরণ হইবার সম্ভাবনা নাই। শিখিয়া যদি কেবল সাহেবের চাকরি ও আপিসের কেরানিগিরি করিয়াই আমরা সন্তুষ্ট থাকিতাম তাহা হইলে কোনো কথাই ছিল না। কিন্তু শিক্ষায় আমাদের মনে যে কর্তব্যের আদর্শ স্থাপিত করিয়াছে তাহা লোকহিত। জনসাধারণের নিকটে আপনাকে কর্মপাশে বদ্ধ করিতে হইবে, সকলকে শিক্ষা বিতরণ করিতে হইবে, সকলকে সরস করিতে হইবে, সকলকে জাতীয় বন্ধনে যুক্ত করিতে হইবে। য a . দেশীয় ভায়া ও দেশীয় সাহিত্যের অবলম্বনব্যতীত এ কার্য কখনো সিদ্ধ হইবার নহে। আমরা । পরের হস্ত হইতে যাহা গ্ৰহণ করিয়াছি দান করিবার সময় নিজের হস্ত দিয়া তাহা বন্টন করিতে হইবে। ইংরাজি শিক্ষার প্রভাবে সর্বসাধারণের নিকট নিজের কর্তব্য পালন করিবার, যাহা লাভ করিয়াছি তাহা সৰ্বসাধারণের জন্য সঞ্চয় করিবার, যাহা সিদ্ধান্ত করিয়াছি তাহা সাধারণের সমক্ষে প্রমাণ করিবার, যাহা ভোগ করিতেছি তাহা সাধারণের মধ্যে বিতরণ করিবার আকাঙক্ষা আমাদের মনে উত্তরোত্তর প্রবল হইয়া উঠিতেছে। কিন্তু অদৃষ্টদোষে সেই আকাঙক্ষা মিটাইবার উপায় এখনো আমাদের পক্ষে যথেষ্ট সুলভ হয় নাই। আমরা ইংরাজি বিদ্যালয় হইতে উদ্দেশ্য শিক্ষা করিতেছি, কিন্তু ऊँ°ाश व्लांड कब्रिडछेि ना । কেহ কেহ বলেন, বিদ্যালয়ে বাংলা-প্রচলনের কোনাে আবশ্যক নাই; কারণ এ পর্যন্ত ইংরাজিশিক্ষিত ব্যক্তিগণ নিজের অনুরাগেই বাংলা-সাহিত্যের সৃষ্টি করিয়াছেন, বাংলা শিখিবার জন্য তাহাদিগকে অতিমাত্র চেষ্টা করিতে হয় নাই। : ) কিন্তু পূর্বেই বলিয়াছি, সময়ের পরিবর্তন হইয়াছে। এখন কেবল ক্ষমতাশালী লেখকের উপর বাংলা সাহিত্য নির্ভর করিতেছে না, এখন তাহা সমস্ত শিক্ষিত-সাধারণের সামগ্ৰী । এখন প্ৰায় কোনো-না-কোনো উপলক্ষে বাংলা ভাষায় ভাবপ্রকাশের জন্য শিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রেরই উপর সমাজের দাবি দেখা যায়। কিন্তু সকলের শক্তি সমান নহে ; অশিক্ষা ও অনভ্যাসের সমস্ত বাধা অতিক্রম করিয়া । আপনার কর্তব্য-পালন সকলের পক্ষে সম্ভব নহে। এবং বাংলা অপেক্ষাকৃত অপরিণত ভাষা বলিয়াই তাহাকে কাজে লাগাইতে হইলে সবিশেষ শিক্ষা এবং নৈপুণ্যের আবশ্যক করে। । এখন বাংলা খবরের কাগজ, মাসিক পত্র, সভাসমিতি, আত্মীয়সমাজ, সর্বত্র হইতেই বঙ্গভূমি তাহার শিক্ষিত সন্তানদিগকে বঙ্গসাহিত্যের মধ্যে আহবান করিতেছে। যাহারা প্ৰস্তুত নহে, যাহারা অক্ষম, তাহারা কিছু না-কিছু সংকোচ অনুভব করিতেছে। অসাধারণ নির্লজ্জ না হইলে আজকাল বাংলা ভাষার অজ্ঞতা লইয়া আস্ফালন করিতে কেহ সাহস করে না। এক্ষণে আমাদের বিদ্যালয় যদি ছাত্রদিগকে আমাদের বর্তমান আদর্শের উপযোগী না করিয়া তোলে, আমাদের সমাজের সর্বাঙ্গণ হিতসাধনে সক্ষম না করে, যে বিদ্যা আমাদিগকে অর্পণ করে সঙ্গে সঙ্গে তাহার দানাধিকার যদি আমাদিগকে না দেয়, আমাদের পরমাত্মীয়দিগকে বুভুক্ষিত দেখিয়াও সে বিদ্যা পরিবেশন করিবার শক্তি যদি আমাদের না থাকে- তবে এমন বিদ্যালয় আমাদের বর্তমান কাল ও অবস্থার পক্ষে অত্যন্ত