পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓ8S রবীন্দ্র-রচনাবলী ‘ভ্ৰষ্ট লগ্ন কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ গ্রামোফোন রেকর্ডের জন্য আবৃত্তি করেন। ঐ আবৃত্তিতে মুদ্রিত পাঠ হইতে কতকগুলি অনৈক্য দেখা যায় ; সেগুলি হইল- প্রত্যেক স্তবকের শেষছত্রে ‘সেই স্থলে “এই, দ্বিতীয় স্তবকের দ্বিতীয় ছত্রে পরিতেছিলেম ও অষ্টম ছত্রে গিয়েছে। ‘অশেষ কবিতার রচনাকাল “২৫ বৈশাখ ১৩০৬ ; ইহা শান্তিনিকেতন-রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত এক রবীন্দ্ৰ-পাণ্ডুলিপি হইতে জানা যায়। ক্ষণিকা ক্ষণিক ১৩০৭ সালের শ্রাবণ মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । , ক্ষণিকার শেষাংশের এক রবীন্দ্ৰ-পাণ্ডুলিপি শান্তিনিকেতন-রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত। তাহার সাহায্যে বহু কবিতার রচনার কাল ও স্থান প্রভৃতি নির্দিষ্ট হইয়াছে। ‘আবির্ভাবী কবিতা সম্বন্ধে কবি চারুচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিয়াছেনকাব্যের একটা বিভাগ আছে যা গানের সহজাতীয় । সেখানে ভাষা কোনো নির্দিষ্ট অর্থ জ্ঞাপন করে না, একটা মায়া রচনা করে, যে মায়া ফায়ুন মাসের দক্ষিণ হাওয়ায়, যে মায়া শরৎ ঋতুতে সূর্যস্তকালের মেঘপুঞ্জে । মনকে রাঙিয়ে তোলে ; এমন কোনো কথা বলে না যাকে বিশ্লেষণ করা সম্ভব । ক্ষণিকার ‘আবির্ভাবী কবিতায় একটা কোনাে অন্তরগুঢ় মানে থাকতে পারে ; কিন্তু সেটা গীেণ ; সমগ্ৰ ভাবে কবিতাটার একটা স্বরূপ আছে- সেটা যদি মনােহর হয়ে থাকে তা হলে আর কিছু বলবার নেই। তবু ‘আবির্ভাবী কবিতায় কেবল সুর নয়, একটা কোনো কথা বলা হয়েছে ; সেটা হচ্ছে এই যে, এক সময়ে মনপ্ৰাণ ছিল ফায়ুন মাসের জগতে, তখন জীবনের কেন্দ্ৰস্থলে একটি রূপ দেখা দিয়েছে আপনি বর্ণ গন্ধ গান নিয়ে, সে বসন্তের রূপ, যৌবনের আবির্ভাব- তার আশা-আকাঙক্ষায় একটি বিশেষ বাণী ছিল । তার পরে জীবনের অভিজ্ঞতা প্রশস্ততর হয়ে এল । তখন সেই প্রথম-যৌবনের বাসন্তী রঙের আকাশে ঘনিয়ে এল বর্ষার সজল শ্যাম সমারোহজীবনে বাণীর বদল হল, বীণায় আর-এক সুর বঁাধতে হবে ; সেদিন যাকে দেখেছিলুম এক বেশে । এক ভাবে, আজ তাকে দেখছি আর-এক মূর্তিতে, খুঁজে বেড়াচ্ছি তারই অভ্যর্থনার নূতন আয়োজন । জীবনের ঋতুতে ঋতুতে যার নূতন প্রকাশ, সে এক হলেও তার জন্যে একই আসন য় না । । -a 8 OcKS Sao মোহিতচন্দ্র সেন -কর্তৃক সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থের ‘লীলা খণ্ডে ক্ষণিকার ‘ভীরুতা’ ‘মাতাল প্রভৃতি অনেকগুলি কবিতা স্থান পাইয়াছিল। এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ কাব্যগ্রন্থের (১৩১০) ভূমিকায় লিখিয়ছিলেন ভালোবাসা আপনাকে প্রকাশ করিবার ব্যাকুলতায় কেবল সত্যকে নহে, অলীককে-সংগতকে নহে,অসংগতকে আশ্রয় করিয়া থাকে। স্নেহ আদর করিয়া সুন্দর মুখকে পোড়ারমুখী বলে, মা আদর করিয়া ছেলেকে দুন্টু বলিয়া মারে, ছলনাপূর্বক ভৎসনা করে। সুন্দরকে সুন্দর বলিয়া যেন আকাঙক্ষার তৃপ্তি হয় না, ভালোবাসার ধনকে ভালোবাসি বলিলে যেন ভাষায় কুলাইয়া উঠে না, সেইজন্য সত্যকে সত্যকথার দ্বারা প্রকাশ করা সম্বন্ধে একেবারে হাল ছাড়িয়া দিয়া ঠিক তাহাদের বিপরীত পথ অবলম্বন করিতে হয় ; তখন বেদনার অশ্রুকে হাস্যচ্ছটায়, গভীর কথাকে কৌতুক-পরিহাসে এবং আদরকে কলহে পরিণত করিতে ইচ্ছা! করে। প্রেমলীলার এই অঙ্গটি এই গ্রন্থাবলীর ‘লীলা খণ্ডে পাঠকেরা পাইবেন । ইহা ছাড়া লীলার মধ্যে আর-একটি জিনিস আছে তাহা বিদ্রোহ। প্রতিকূলতার কাছে বেদনা স্পর্ধপূর্বক