পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ग्रैकbिानि লেখার উদ্দেশ্য • 1. আমি যা লিখে থাকি তা অনেকের ভালো লাগে না। এই কথাটি আমাকে সাধারণত যে - ভাষায় বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা হয় নানা স্বাভাবিক কারণে সে ভাষায় আমার দখল নেই। এইজন্য যথারীতি তার জবাব দেওয়া আমার পক্ষে অসাধ্য ৭ এমন অবস্থায় হঠাৎ একখানি চিঠি পেলুম, সেই চিঠিতে অভিযোগ আছে কিন্তু অবমাননা নেই। চিঠিখনি কোনো মহিলার লেখা, তিনি আমার অপরিচিত। এই চিঠিতে র্তার স্ত্রীজনোচিত সংযম ও সৌজন্য এবং মাতৃজনােচিত করুণা প্রকাশ পাচ্ছে। তিনি দুঃখবােধ করেছেন, কিন্তু দুঃখ দিতে চান নি । তিনি নিজের কোনাে ঠিকানা দেন নি, অথচ কয়েকটি প্রশ্ন করেছেন- এর থেকে অনুমান করছি যে, এই প্রশ্ন তিনি সাধারণের হয়ে পাঠিয়েছেন এবং সাধারণের ঠিকানাতেই এর জবাব bN অতএব তার ভংসনার উত্তরে যে-কটি কথা বলবার আছে সে আমি এই সবুজ পত্ৰযোগে র্তার কাছে সবিনয়ে নিবেদন করি । এই উপলক্ষে সাধারণত আমাদের দেশে যে ভাবে সাহিত্যবিচার হয়ে থাকে প্রসঙ্গত সে সম্বন্ধেও কিছু আলোচনা করব।

  • কিছু ক্ষোভের সঙ্গেই জিজ্ঞাসা করেছেন— ঘরে-বাইরে উপন্যাসখানি লেখবার উদেশ্য কী ?

এর সত্য উত্তরটি এই যে, উপন্যাস লেখার উদ্দেশ্যই উপন্যাস লেখা। সাদা কথায়, গল্প . লিখব আমার খুশি । r কিন্তু একে উদ্দেশ্য বলা যায় না। কেননা খুশি’ বলাই উদ্দেশ্যকে অস্বীকার করা। এবং যখন কোনো-একটা উদ্দেশ্যই লোকে প্রত্যাশা করছে তখন সেটা নেই বললেই কথাটা স্পর্ধার মতো শুনতে হয় । । 呼 কিন্তু অনেক সময় উদ্দেশ্য বাইরে থেকে দেখতে পাওয়া যায়। হরিণের গায়ে চিহ্ন আছে কেন হরিণ তা জানে না, কিন্তু হরিণ সম্বন্ধে র্যােরা বই লেখেন তারা বলেন, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে এই সমস্ত চিহ্নের দ্বারা বনের আলোছায়ার সঙ্গে সে বেমালুম মিশিয়ে থাকতে পারবে। এই আন্দাজ সত্যও হতে পারে, মিথ্যাও হতে পারে, কিন্তু উদ্দেশ্যটা যে হরিণের মনের নয় সে কথা সকলকেই মানতে হবে। উদ্দেশ্য হরিণের নয়, কিন্তু হরিণের ভিতর দিয়ে বিশ্বকর্মর একটা উদ্দেশ্য তো প্রকাশ পাচ্ছে। তা হয়তো পাচ্ছে। তেমনি যে কালে লেখক জন্মগ্রহণ করেছে সেই কালটি লেখকের ভিতর দিয়ে হয়তো আপন উদ্দেশ্য ফুটিয়ে তুলেছে। তাকে উদ্দেশ্য নাম দিতে পারিবা না পারি, এ কথা বলা চলে যে, লেখকের কাল লেখকের চিত্তের মধ্যে গোচরে ও অগোচরে কাজ করছে। আমি বলছি এ কাজও শিল্পকাজ, শিক্ষাদানের কাজ নয়। কাল আমাদের মনের মধ্যে তার নানা রঙের সুতোয় জাল বুনছে, সেই তার সৃষ্টি, আমি তার থেকে যদি কিছু আদায় করতে চাই তবে সে উদ্দেশ্য আমারই। r আমাদের দেশের আধুনিক কাল গোপনে লেখকের মনে যে-সব রেখাপাত করেছে ঘরে-বাইরে গল্পের মধ্যে তার ছাপ পড়েছে। কিন্তু এই ছাপার কাজ শিল্পকাজ। এর ভিতর থেকে যদি কোনাে সুশিক্ষা বা কুশিক্ষা আদায় করবার থাকে সেটা লেখকের উদ্দেশ্যের অঙ্গ। । नव। পৃথিবীর খুব একজন বড়ো লেখকের লেখা সামনে ধরা যাক। শেক্সপীয়রের ওথেলো। : কবিকে যদি জিজ্ঞাসা করা যায় তঁর উদ্দেশ্য কী, তিনি মুশকিলে পড়বেন। ভেবে চিন্তে যদি-বা