পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

see झीक्ष-मानविकी যে, যা সত্য মনে করি তাকে প্রকাশ করতে গিয়ে লেখিকার মতাে অনেক সরল, শ্রদ্ধাবান, স্বদেশবৎসল ও সকরুণ হৃদয়ে বেদনা দিয়েছি। সে আমার দুর্ভাগ্য কিন্তু সে আমার অপরাধ নয় | -সবুজ পত্র । অগ্রহায়ণ ১৩২২ ঘরে বাইরে গ্রন্থকারে প্রকাশিত হইবার পর বহুকাল পর্যন্ত ইহার বিরুদ্ধে নানা জনের নানারূপ সমালোচনা চলিয়াছিল। প্রবাসীতে “সাহিত্যবিচার প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ এ সম্বন্ধে স্বীয় বক্তব্য প্রকাশ করেন ; নিম্নে তাহা মুদ্রিত হইল ঘরে-বাইরে উপন্যাসখনা লইয়া বাংলার পাঠকমহলে এখনাে কথা চলিতেছে। হৃদয়বেগ যখন অত্যন্ত প্রবল হয় তখন মানুষ গদ্য ছাড়িয়া পদ্য ধরে। সম্প্রতি তাহারও সূচনা প্রকাশ পাইতেছে | এক জায়গায় দেখিলাম, ঘরে-বাইরে সম্বন্ধে ক্ষোভ চোদ্দ অক্ষরের লাইনে লাইনে রক্তবর্ণ হইয়া ফুটিয়াছে। ইহাতে পদ্যসাহিত্যের বিপদ চিন্তা করিয়া উদবিগ্ন হইলাম। পাছে ইহা সংক্ৰামক হইয়া পড়ে সেইজন্যে এ সম্বন্ধে উদাসীন থাকিতে পারিলাম না । পছন্দ লইয়া মানুষের সঙ্গে তর্ক চলে না। ভর্তুহরির অনেক পূর্ব হইতেই কবিরা এ সম্বন্ধে অবস্থাবিশেষে হাল ছাড়িয়া বসিয়া আছেন। স্বয়ং কালিদাসও কবিতাই লিখিয়াছেন, কিন্তু দিঙনাগাচার্যের সহিত বাদপ্রতিবাদ করেন নাই। সাধারণত কবিদের নিন্দা-অসহিষ্ণু বলিয়া খ্যাতি আছে ; কিন্তু সেই অসহিষ্ণুতা লইয়া (দুই-একজন ছাড়া) তাহারা নিজেরাই ক্ষোভ অনুভব করিয়াছেন, সাহিত্যকে ক্ষুব্ধ করিয়া তোলেন নাই। যখন তঁহাদের লেখার প্রতি কেহ কলঙ্ক আরোপ করিয়াছেন তখন সেই কলঙ্কভঞ্জনের ভার তঁহার কালের হস্তেই সমৰ্পণ করিয়াছেন । তঁহাদের মধ্যে র্যাহারা ভাগ্যবান তঁহাদের লেখা সম্বন্ধে ইহাই প্রমাণ হইয়া গেছে যে, তাহাদের রচনার কলসে আলংকারিক ছিদ্র, একটা কেন, একশোটা থাকিতে পারে, কিন্তু তবু তাহা হইতে রস বাহির হইয়া যায় নাই। সাহিত্যে এই কলঙ্কভঞ্জনের পালা অনেক দিন হইতে অনেক বার ; অভিনীত হইয়াছে, র্যাহারা আলংকারিক তঁহাদের গঞ্জনা হইতে কবিরা বারবার রক্ষা পাইয়াছেন । 曲 ঘরে-বাইরে সম্বন্ধে রসবােধ লইয়া যদি কথা উঠিত। তবে সে কথা যতই কটু হউক নীরব থাকিতাম। কিন্তু যে কথা উঠিয়াছে তাহা সাহিত্যসীমানার বাহিরের জিনিস। তাহা যুক্তির অধিকারের মধ্যে, সুতরাং ত্যাহা লইয়া তর্ক চলে এবং তর্ক না চালাইলে কর্তব্যপালন করা হয় না। কারণ, যাহা অন্যায় তাহাকে সহ্য করিয়া গেলে সাধারণের প্রতি অন্যায় করা হয় । ঘরে-বাইরে বাহির হইবার পরেই আমার বিরুদ্ধে একটা নালিশ শোনা গেল যে, আমি এই উপন্যাসে সীতার প্রতি অসম্মান প্রকাশ করিয়াছি। কথাটা এতই অদ্ভুত যে আমি আশা করিয়াছিলাম যে, এমন-কি, আমাদের দেশেও ইহা গ্ৰাহ্য হইবে না। কিন্তু দেখিলাম, লোকে উৎসাহের সহিত ইহা গ্ৰহণ করিয়াছে ; এবং জনগণের নিন্দায় একদা সীতা যেরূপ নির্বাসিত সুগ্ৰহণ সেইরূপ প্ৰমানদের সভা ও লাইব্রেরিঘরের টেবিল হইতে নির্বাসিত হইতে এটাকে সামান্য ব্যক্তিগত হিসাবে দেখিলে ইহাতে বিশেষ ক্ষতিবৃদ্ধি নাই। কিন্তু যে-কোনাে প্রভাবে মানুষের বিচারবুদ্ধিকে বিকৃত করে সেই প্রভাব যদি ব্যাপক হইয়া উঠিতে থাকে। তবে সেটাকে সাধারণের পক্ষে ক্ষতিজনক বলিয়া গণ্য করিতে হইবে । অতএব ঘরে-বাইরে গ্রন্থের যে অপরাধ বানাইয়া তুলিয়া আমার প্রতি কেবলই আক্রোশবর্ষণ চলিতেছে, সেই অপরাধের অভিযোগটাকে বিশ্লেষণ করিয়া দেখা দরকার। .