পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ནརྩ༠ রবীন্দ্র-রচনাবলী হইয়া উঠিবে তাহা আমার অন্তরে বাজিতেছে, কিন্তু তাহা প্রকাশ করিবার সাধ্য আমার নাই। সেইদিনকার বঙ্গসাহিত্যের জন্য আমরা অপেক্ষা করিয়া আছি, ততদিন যাহা করিতেছি তাহা ক্রীড়াচ্ছলে সময়ব্যাপন মাত্র । , --বঙ্গদর্শন। শ্রাবণ ১৩০৯ সাহিত্যসম্মিলন প্ৰবন্ধ “ভারতীয় শিল্পপ্রদর্শনীক্ষেত্রে সাহিত্যসম্মিলন উপলক্ষে পঠিত হয়। হইয়াছিল।” বঙ্গীয় সাহিত্যসম্মিলন প্রসঙ্গে নিম্নলিখিত বিবরণ বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষদের প্রতিবেদন ও ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় -সংকলিত ‘পরিষৎপরিচয় হইতে উদধূত হইল। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যসম্মিলন ‘অনুষ্ঠানের আবশ্যকতা সর্বপ্রথম পরিষদের সম্মুখে উপস্থিত জাতীয় ভাষা ও সাহিত্য জাতীয় ঐক্যবন্ধন রক্ষার সর্বোৎকৃষ্ট উপায়। বঙ্গবিভাগের পর এই কথাটা অনেকের মনে স্পষ্টভাবে উঠিয়ছিল। এই বন্ধন দৃঢ় করিবার জন্য বর্ষে বর্ষে বঙ্গের ভিন্ন ভিন্ন নগরে সাহিত্যসম্মিলনের ব্যবস্থা করিয়া সাহিত্যসেবীদিগের মিলনসাধন এবং বাংলার প্রাদেশিক ভাষা সাহিত্য ভূগোল ইতিহাস ও বিবিধ তত্ত্বের আলোচনা চলিতে পারে। স্বদেশী আন্দোলনের আরম্ভে গত ভাদ্র মাসে টাউন হলে পরিষদের সহকারী সভাপতি শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় ‘অবস্থা ও ব্যবস্থা’ নামক এক প্ৰবন্ধ পাঠ করেন। ঐ প্রবন্ধে তিনি ঐ প্রস্তাব সাধারণের সম্মুখে উপস্থিত করিয়া সাহিত্যপরিষৎকে ঐরাপ বার্ষিক সম্মিলনের আয়োজন করিতে অনুরোধ করেন। প্রস্তাবকর্তার সহিত কথাবার্তায় বুঝা গিয়াছিল যে, বিলাতের British Association for the Advancement of Science Štoro eroto3 ouvriffo | à সমাজ কেবল বিজ্ঞানশাস্ত্ৰ আলোচনা করেন, পরিষৎ এই উপলক্ষে বঙ্গের যাবতীয় জ্ঞাতব্য তথ্যের আলোচনা করিবেন, এই মাত্র প্রভেদ ছিল । তৎপরে এই প্ৰস্তাব পরিষদে আলোচিত হয় ও কর্মের গুরুত্ব-বিবেচনায় পরিষৎ এ বিষয়ে সাবধানে অগ্রসর হইতেছিলেন । । বৎসরের শেষভাগে রংপুরের শাখা-পরিষদের সংস্থাপক ও সম্পাদক শ্ৰীযুক্ত সুরেন্দ্ৰচন্দ্ৰ রায়চৌধুরী মহাশয় শাখা-সভার বার্ষিক অধিবেশন উপলক্ষে পরিষৎকে নিমন্ত্রণ করেন।. এই ১ “আত্মশক্তি’ গ্রন্থের অন্তর্গত। প্রচলিত রবীন্দ্র-রচনাবলী, তৃতীয় খণ্ড ; সুলভসংস্করণ দ্বিতীয় খণ্ড : “এই-যে স্বাধীন বাংলা সাহিত্য, যাহার মধ্যে বাঙালি নিজের প্রকৃত শক্তি যথার্থভাবে অনুভব করিয়াছে, এই সাহিত্যই নাড়িজালের মতো বাংলার পূর্বপ্নশ্চিম-উত্তরদক্ষিণকে এক বন্ধনে বঁাধিয়াছে, তাহার মধ্যে এক চেতনা এক প্রাণ সঞ্চার করিয়া রাখিতেছে ; যদি আমাদের দেশে স্বদেশী সভা স্থাপন হয় তবে বাংলা সাহিত্যের অভাবমোচন, বাংলা সাহিত্যের পুষ্টিসাধন সভ্যগণের একটি বিশেষ কার্য হইবে। বাংলা ভাষা অবলম্বন করিয়া ইতিহাস বিজ্ঞান অর্থনীতি প্রভৃতি বিচিত্র বিষয়ে দেশে জ্ঞানবিস্তারের চেষ্টা তাহাদিগকে করিতে হইবে। ইহা নিশ্চয় জানিতে হইবে যে,বাংলা সাহিত্য যত উন্নত সতেজ, যতই সম্পূর্ণ হইবে, ততই এই সাহিত্যই বাঙালিজাতিকে এক করিয়া ধারণ করিবার অনশ্বর আধার হইবে।-- ‘আমরা এই সময়ে এই উপলক্ষে বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষৎকে বাংলার ঐক্যসাধনযজ্ঞে বিশেষভাবে । আহবান করিতেছি । তাহারা পরের দিকে না তাকাইয়া, নিজেকে পরের কাছে প্রচার না করিয়া নিজের সাধ্যমত স্বদেশের পরিচয় লাভ ও তাহার জানভাণ্ডার পূরণ করিতেছেন। এই পরিষৎকে জেলায় জেলায় আপনার শাখাসভা স্থাপন করিতে হইবে এবং পর্যায়ক্রমে এক-একটি জেলায় গিয়া পরিষদের বার্ষিক অধিবেশন সম্পন্ন করিতে হইবে। আমাদের চিন্তার ঐক্য, ভাষার ঐক্য, সাহিত্যের ঐক্য সম্বন্ধে সমস্ত দেশকে সচেতন করিবার- এই ভাষা ও সাহিত্য সম্বন্ধে আপনি স্বাধীন কর্তব্য পালন করিবার ভার সাহিত্যপরিষদ গ্ৰহণ করিয়াছেন। এখন সময় উপস্থিত হইয়াছে, এখন সমস্ত দেশকে নিজের আনুকূল্যে আহবান করিবার জন্য তঁহাদিগকে সচেষ্ট হইতে হইবে।”