পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাহিনী গানতঙ্গ গাহিছে। কাশীনাথ নবীন যুবা, ধ্বনিতে সভাগৃহ ঢাকি, কণ্ঠে খেলিতেছে সাতটি সুর সাতটি যেন পোষা পাখি । কখন কোথা যায় না পাই দিশা, বিজুলি-হেন ঝিকিমিকে । আপনি গড়ি তোলে বিপদ জাল, আপনি কাটি দেয় তাহা— সভার লোকে শুনে অবাক মানে, সঘনে বলে ‘বাহা বাহা । কেবল বুড়া রাজা প্ৰতাপ রায় কাঠের মতো বসি আছে, বরজলাল ছাড়া কাহারও গান ভালো না লাগে তার কাছে ! বালকবেলা হতে তাহারি গীতে দিল সে এতকাল যাপি— বাদল-দিনে কত মেঘের গান, হোলির দিনে কত কাফি । গেয়েছে আগমনী। শরৎপ্ৰাতে গেয়েছে বিজয়ার গান— হৃদয় উছসিয়া আশ্রমজলে ভাসিয়া গেছে দুনিয়ান । যখনি মিলিয়াছে বন্ধুজনে সভার গৃহ গেছে পুরে, গেয়েছে গোকুলের গোয়াল-গাথা ভূপালি মূলতানি সুরে । ঘরেতে বারবার এসেছে কত বিবাহ-উৎসবরাতি, পরেছে দাসদাসী লোহিত বাস, জ্বলেছে শত শত বাতিবসেছে নব বর সলাজ মুখে পরিয়া মণি-আভরণ, করিছে পরিহাস কনের কাছে সমবয়সী প্ৰিয়জন, সে-সব দিন আর সে-সব গান হৃদয়ে আছে পরিপূর । সে ছাড়া কারো গান শুনিলে তাই মর্মে গিয়ে নাহি লাগে, অতীত প্ৰাণ যেন মন্ত্রবলে নিমেষে প্ৰাণে নাহি জাগে । প্ৰতাপ রায় তাই দেখিছে। শুধু কাশীর বৃথা মাথা নাড়া— থামিল গান যবে, ক্ষণেক-তরে বিরাম মাগে কাশীনাথবরজলাল-পানে প্ৰতাপ রায় হাসিয়া করে তঁমাখিপাত । কানের কাছে তার রাখিয়া মুখ কহিল, ‘ওস্তাদজি, গানের মতো গান শুনায়ে দাও, এরে কি গান বলে। ! ছিঃ ! এ যেন পাখি লয়ে বিবিধ ছলে শিকারী বিড়ালের খেলা । সেকালে গান ছিল, একালে হায় গানের বড়ো অবহেলা ।” f