পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 তৃণহীন সুকঠিন শতদীর্ণ ধরা, রৌদ্রবর্ণ বনফুলে কঁাটাগাছ ভরা । দিবসের তাপ ভূমি দিতেছে ফিরায়ে— পথ্যশূন্য, জনশূন্য, সাড়া-শব্দ-হীন । ডুবে রবি, যেমন সে ডুবে প্রতিদিন । রঘুনাথ হেথা আসি যাবে উত্তরিলা শিখগুরু পড়িছেন। ভগবৎ-লীলা । রঘু কহিলেন নমি চরণে তাহার, “দীন আনিয়ছে, প্ৰভু, হীন উপহার ।” বাহু বাড়াইয়া গুরু শুধায়ে কুশল আশিসিলা মাথায় পরশি করতল । কনকে মাণিক্যে গাথা বলয়-দুখানি গুরুপদে দিলা রঘু জুড়ি দুই পাণি । ভূমিতল হতে বালা লইলেন তুলে, দেখিতে লাগিলা প্ৰভু ঘুরায়ে অঙ্গলে । হীরকের সূচীমুখ শতবার ঘুরি হানিতে লাগিল শত আলোকের ছুরি । ঈষৎ হাসিয়া গুরু পাশে দিলা রাখি, আবার সে পুঁথি-পরে নিবেশিলা আঁখি । সহসা একটি বালা শিলাতল হতে গড়য়ে পডিয়া গেল যমুনার স্রোতে । “আহা আহা৷” চীৎকার করি রঘুনাথ বঁ্যাপায়ে পড়িল জলে বাড়ায়ে দু হাত । আগ্রহে সমস্ত তার প্রাণমনকায় একখানি বাহু হয়ে ধরিবারে যায় । বারেকের তরে গুরু না তুলিলা মুখ, নিভূত অন্তরে তার জাগে পাঠসুখ । কালো জল কটাক্ষিয়া চলে ঘুরি ঘুরি, যেন সে ছলনাভিরা সুগভীর চুরি । দিবালোক চলে গেল দিবসের পিছু যমুনা উতলা করি না মিলিল কিছু । রঘুনাথ গুরু-কাছে আসিলেন ফিরে ।