পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Swb" রবীন্দ্র-রচনাবলী পথিক। যন্ত্রের কাজটা কী ? নাগরিক। মুক্তধারা ঝরনাকে বেঁধেছে। পথিক । বাবা রে । ওটাকে অস্বরের মাথার মতো দেখাচ্ছে, মাংস নেই, চোয়াল ঝোলা। তোমাদের উত্তরকুটের শিয়রের কাছে অমন ই করে দাড়িয়ে ; দিনরাত্তির দেখতে দেখতে তোমাদের প্রাণ পুরুষ যে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে। নাগরিক। আমাদের প্রাণপুরুষ মজবুত আছে, ভাবনা করে না। পথিক । তা হতে পারে, কিন্তু ওটা অমনতরো স্বৰ্ষতারার সামনে মেলে রাখবার জিনিস নয়, ঢাকা দিতে পারলেই ভালো হত। দেখতে পাচ্ছ না যেন দিনরাত্তির সমস্ত আকাশকে রাগিয়ে দিচ্ছে । নাগরিক । আজ ভৈরবের আরতি দেখতে যাবে না ? পথিক । দেখব বলেই বেরিয়েছিলুম। প্রতিবৎসরই তো এই সময় আসি, কিন্তু মন্দিরের উপরের আকাশে কখনো এমনতরো বাধা দেখি নি। হঠাৎ ওইটের দিকে তাকিয়ে আজ আমার গা শিউরে উঠল—ও যে আমন করে মন্দিরের মাথা ছাড়িয়ে গেল এটা যেন স্পর্ধার মতো দেখাচ্ছে । দিয়ে আসি নৈবেদ্য, কিন্তু মন প্রসন্ন হচ্ছে না । [ প্রস্থান একজন স্ত্রীলোকের প্রবেশ একখানি শুভ্র চাদর তাহার মাথা ঘিরিয়া সর্বাঙ্গ ঢাকিয়া মাটিতে লুটাইয়া পড়িতেছে স্ত্রীলোক। স্বমন । আমার স্বমন ৷ ( নাগরিকের প্রতি ) বাবা আমার স্বমন এখনও ফিরল না। তোমরা তো সবাই ফিরেছ। নাগরিক। কে তুমি ? স্ত্রীলোক। আমি জনাই গায়ের অস্বী । সে যে আমার চোখের আলো, আমার প্রাণের নিশ্বাস, আমার স্বমন ৷ নাগরিক। তার কী হয়েছে বাছা ? অম্বা। তাকে যে কোথায় নিয়ে গেল। আমি ভৈরবের মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলুম—ফিরে এসে দেখি তাকে নিয়ে গেছে। পথিক । তা হলে মুক্তধারার বাধ বাধতে তাকে নিয়ে গিয়েছিল। অম্বা। আমি শুনেছি এই পথ দিয়ে তাকে নিয়ে গেল, ওই গৌরীশিখরের পশ্চিমে—সেখানে আমার দৃষ্টি পৌছয় না, তার পরে আর পথ দেখতে পাই নে। পথিক । কেঁদে কী হবে ? অামরা চলেছি ভৈরবের মন্দিরে আরতি দেখতে । আজ আমাদের বড়ো দিন, তুমিও চলে।