পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ চন্দ্রনারায়ণের একটা ঘোড়া তিনি রীতিমত দখল করিয়াছিলেন, দেখিয়া যুবরাজ ঈষৎ হাসিলেন, কিন্তু কিছু বলিলেন না। অার একবার কুমার ইন্দ্রকুমারের রুপার পাত লাগানো একটা ধন্থক অমানবদনে অধিকার করিয়াছিলেন—ইন্দ্রকুমার চটিয়া বলিলেন, *দেখো, যে জিনিস লইয়াছ উহা আমি আর ফিরাইয়া লইতে চাহি না, কিন্তু ফের যদি তুমি আমার জিনিলে হাত দাও, তবে আমি এমন করিয়া দিব যে, ও-হাতে জার জিনিস তুলিতে পারিবে না।” কিন্তু রাজধর দাদাদের কথা বড়ো গ্রাহ করিতেন না। লোকে তাহার আচরণ দেখিয়া আড়ালে বলিত, “ছোটোকুমারের রাজার ঘরে জন্ম বটে, কিন্তু রাজার ছেলের মতো কিছুই দেখি না।” কিন্তু মহারাজা অমরমাণিক্য রাজধরকে কিছু বেশি ভালোবাসিতেন। রাজধর তাহা জানিতেন। আজ পিতার কাছে গিয়া ইশা খার নামে নালিশ করিলেন । রাজা ইশা খাকে ডাকাইয়া আনিলেন। বলিলেন, “সেনাপতি, রাজকুমারদের এখন বয়স হইয়াছে। এখন উহাদিগকে যথোচিত সন্মান করা উচিত।” “মহারাজ বাল্যকালে যখন আমার কাছে যুদ্ধ শিক্ষা করিতেন তখন মহারাজকে ষেরূপ সম্মান করিতাম, রাজকুমারগণকে তাহা অপেক্ষ কম সম্মান করি না।” রাজধর বলিলেন, “আমার অনুরোধ, তুমি আমার নাম ধরিয়া ডাকিয়ে না।” ইশা খ বিদ্যুদ্বেগে মুখ ফিরাইয়া কহিলেন, "চুপ করো বংল। আমি তোমার পিতার সহিত কথা কহিতেছি। মহারাজ, মার্জনা করিবেন, আপনার এই কনিষ্ঠ পুত্রটি রাজপরিবারের উপযুক্ত হয় নাই। ইহার হাতে তলোয়ার শোভা পায় না। এ বড়ো হইলে মুনশির মতে কলম চালাইতে পরিবে—আর কোনো কাজে লাগিবে না।” এমন সময়ে চন্দ্রনারায়ণ ও ইন্দ্রকুমার সেখানে উপস্থিত হইলেন। ইশা খাঁ তাহাদের দিকে ফিরিয়া বলিলেন, "চাহিয়া দেখুন মহারাজ, এই তো যুবরাজ বটে। এই তো রাজপুত্র বটে।” রাজা রাজধরের দিকে চাহিয়া বলিলেন, “রাজধর, খ সাহেব কী বলিতেছেন। তুমি অস্ত্রবিদ্যায় উহাকে সন্তুষ্ট করিতে পার নাই ?” রাজধর বলিলেন, "মহারাজ, আমাদের ধন্থবিদ্যার পরীক্ষা গ্রহণ করুন, পরীক্ষায় যদি আমি সর্বশ্রেষ্ঠ না হই তবে আমাকে পরিত্যাগ করিবেন। আমি রাজবাটী ছাড়িয়া চলিয়া যাইব ।” রাজা বলিলেন, “আচ্ছা, আগামী সপ্তাহে পরীক্ষা হইবে। তোমাদের মধ্যে যিনি উত্তীর্ণ হইবেন, তাহাকে আমার হীরকখচিত তলোয়ার পুরস্কার দিব।”