পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

'ఆషి রবীন্দ্র-রচনাবলী তৃতীয় পরিচ্ছেদ * * ইন্দ্রকুমার ধমুর্বিষ্ঠায় অসাধারণ ছিলেন। শুনা যায় একবার তাহার এক অমুচর প্রাসাদের ছাদের উপর হইতে একটা মোহর নিচে ফেলিয়া দেয়, সেই মোহর মাটিতে পড়িতে না পড়িতে তীর মারিয়া কুমার তাহাকে শত হাত দূরে ফেলিয়াছিলেন। রাজধর রাগের মাথায় পিতার সম্মুখে দম্ভ করিয়া আসিলেন বটে, কিন্তু মনের ভিতরে বড়ো ভাবনা পড়িয়া গেল। যুবরাজ চন্দ্রনারায়ণের জন্ত বড়ো ভাবনা নাই— তীর-ছোড়া বিদ্যা তাহার ভালো আসিত না, কিন্তু ইন্দ্রকুমারের সঙ্গে আঁটিয়া উঠা দায় । রাজধর অনেক ভাবিয়া অবশেষে একটা ফন্দি ঠাওরাইলেন । হাসিয়া মনে মনে বলিলেন, “তাঁর ছড়িতে পারি না-পারি, আমার বুদ্ধি তীরের মতো–তাহাতে সকল লক্ষ্যই ভেদ হয়।” কাল পরীক্ষার দিন। ষে-জায়গাতে পরীক্ষা হইবে, যুবরাজ, ইশা খা ও ইন্দ্রকুমার সেই জমি তদারক করিতে গিয়াছেন। রাজধর আসিয়া বলিলেন, "দাদা, আজ পূর্ণিমা আছে—আজ রাত্রে যখন বাঘ গোমতী নদীতে জল খাইতে আসিবে, তখন নদীতীরে বাঘ শিকার করিতে গেলে হয় না ?” ইন্দ্রকুমার আশ্চর্ষ হইয়া বলিলেন, “কী আশ্চর্ষ। রাজধরের যে আজ শিকারে প্রবৃত্তি হইল ? এমন তো কখনো দেখা যায় না।” ইশা খাঁ রাজধরের প্রতি ঘৃণার কটাক্ষ নিক্ষেপ করিয়া কহিলেন, “উনি আবার শিকারি নন, উনি জাল পাতিয়া ঘরের মধ্যে শিকার করেন । উহার বড়ো ভয়ানক শিকার। রাজসভায় একটি জীব নাই যে উহার ফদে একবার-ন-একবার না পড়িয়াছে।” চন্দ্রনারায়ণ দেখিলেন কথাটা রাজধরের মনে লাগিয়াছে—ব্যথিত হইয়া বলিলেন, “সেনাপতি সাহেব, তোমার তলোয়ারও যেমন তোমার কথাও তেমনি, উভয়ই শাণিত— যাহার উপরে গিয়া পড়ে, তাহার মর্মচ্ছেদ করে।” রাজধর হাসিয়া বলিলেন, “না দাদা, আমার জন্য বেশি ভাবিয়ে না। ঐ সাহেব অনেক শান দিয়া কথা কহেন বটে, কিন্তু আমার কানের মধ্যে পালকের মতো প্রবেশ করে ।” ইশা খাঁ হঠাৎ চটিয়া উঠিয়া পাকা গোফে চাড়া দিয়া বলিলেন, “তোমার কান আছে নাকি । তা যদি থাকিত, তাহা হইলে এতদিন তোমাকে সিধা করিতে পারিতাম।” বুদ্ধ ইশা খাঁ কাহাকেও বড়ো মান্ত করিতেন না ।