পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

. २१> গাম্ভারির বন । মাঝে মাঝে গ্রামবাসীদের শূন্ত গৃহ পড়িয়া রহিয়াছে, তাহারা ঘর ছাড়িয়া পালাইয়াছে। মাঝে মাঝে শস্তক্ষেত্র। পাহাড়িরা সেখানে ধান কাপাস তরমুজ আলু একত্রে রোপণ করিয়া গিয়াছে। আবার এক-এক জায়গায় জুমিয়া চাষার এক-একটা পাহাড় সমস্ত দগ্ধ করিয়া কালো করিয়া রাখিয়াছে, বর্ষার পর সেখানে শস্য বপন হইবে। দক্ষিণে কর্ণফুলি, বামে দুর্গম পৰ্বত । এইখানে প্রায় এক সপ্তাহকাল উভয় পক্ষ পরস্পরের আক্রমণপ্রতীক্ষায় বসিয়া আছে। ইন্দ্রকুমার যুদ্ধের জন্য অস্থির হইয়াছেন, কিন্তু যুবরাজের ইচ্ছা বিপক্ষপক্ষের আগে আসিয়া আক্রমণ করে। সেইজন্ত বিলম্ব করিতেছেন–কিন্তু তাহারাও নড়িতে চাহে না, স্থির হইয়া আছে। অবশেষে আক্রমণ করাই স্থির হইল । সমস্ত রাত্রি আক্রমণের আয়োজন চলিতে লাগিল। রাজধর প্রস্তাব করিলেন, "দাদা, তোমরা দুইজনে তোমাদের দশ হাজার সৈন্য লইয়া আক্রমণ করো। আমার পাচ হাজার হাতে থাক, আবশ্বকের সময় কাজে লাগিবে।” ইন্দ্রকুমার হাসিয়া বলিলেন, “রাজধর তফাতে থাকিতে চান ।” যুবরাজ কহিলেন, “না, হাসির কথা নয়। রাজধরের প্রস্তাব আমার ভালো বোধ হইতেছে।” ইশা খাও তাহাই বলিলেন । রাজধরের প্রস্তাব গ্রাহ হইল। যুবরাজ ও ইন্দ্রকুমারের অধীনে দশ হাজার সৈন্ত পাচ ভাগে ভাগ করা হইল। প্রত্যেক ভাগে দুই হাজার করিয়া সৈন্ত রহিল। স্থির হইল, একেবারে শক্রব্যুহের পাচ জায়গায় আক্রমণ করিয়া ব্যুহভেদ করিবার চেষ্টা করা হইবে। সর্বপ্রথম সারে ধাতুকীর রহিল, তার পরে তলোয়ার বর্শ প্রভৃতি লইয়া অন্ত পদাতিকের রছিল এবং সর্বশেষে অশ্বারোহীরা সার বাধিয়া চলিল। " আরাকানের মগ সৈন্তের দীর্ঘ এক বাশবনের পশ্চাতে বৃহরচনা করিয়াছিল। প্রথম দিনের আক্রমণে কিছুই হইল না। ত্রিপুরার সৈন্ত ব্যুহ ভেদ করিতে পারিল না। সপ্তম পরিচ্ছেদ দ্বিতীয় দিন সমস্ত দিন নিষ্ফল যুদ্ধ অবসানে রাত্রি যখন নিশীথ হইল—যখন উভয় পক্ষের সৈন্যেরা বিশ্রামলাভ করিতেছে, দুই পাহাড়ের উপর দুই শিবিরের স্থানে স্থানে কেবল এক-একটা আগুন জলিতেছে, শৃগালের রণক্ষেত্রে ছিন্ন হস্তপদ ও মৃতদেহের মধ্যে থাকিয়া থাকিয়া দলে দলে কাদিয়া উঠিতেছে—তখন শিবিরের দুই ক্রোশ দূরে রাজধর তাহার পাচ হাজার সৈন্য লইয়। সারবন্দি নৌকা বাধিয়া কর্ণফুলি