পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

는g রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহাদের নিজের অশ্ব নিজের পদাতিকদের উপর গিয়া পড়িল, কোন দিকে যাইবে ঠিকানা পাইল না। যুবরাজ ও ইশা খা আসমসাহসের সহিত সৈন্যদের সংযত করিয়া লইতে প্রাণপণ চেষ্টা করিলেন, কিন্তু কিছুতেই কৃতকার্য হইতে পারিলেন না। অদূরে রাজধরের সৈন্য লুক্কায়িত আছে কল্পনা করিয়া সংকেতস্বরূপ বার বার তুরানিনাদ করিলেন কিন্তু রাজধরের সৈন্তের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পাইল না। ইশা খা বলিলেন, “তাহাকে ডাকা বৃথা । সে শৃগাল দিনের বেলা গর্ত হইতে বাহির হইবে না।” ইশা খী ঘোড়া হইতে মাটিতে লাফাইয়া পড়িলেন । পশ্চিম মুখ হইয়া সত্বর নামাজ পড়িয়া লইলেন। মরিবার জন্ত প্রস্তুত হইয়া মরিয়া হইয়া লড়িতে লাগিলেন। চারিদিকে মৃত্যু যতই ঘেরিতে লাগিল, দুর্দান্ত যৌবন ততই যেন তাহার দেহে ফিরিয়া আসিতে লাগিল । এমন সময় ইন্দ্রকুমার শক্ৰদের এক অংশ সম্পূর্ণ জয় করিয়া ফিরিয়া আসিলেন। আসিয়া দেখিলেন যুবরাজের একদল অশ্বারোহী সৈন্য ছিন্নভিন্ন হইয়া পালাইতেছে, তিনি তাহাদিগকে ফিরাইয়া লইলেন । বিদ্যুদবেগে যুবরাজের সাহায্যার্থে আসিলেন। কিন্তু সে বিশৃঙ্খলার মধ্যে কিছুই কুলকিনারা পাইলেন না । ঘূর্ণ বাতাসে মরুভূমির বালুকারাশি যেমন ঘুরিতে থাকে, উপত্যকার মাঝখানে যুদ্ধ তেমনই পাক খাইতে লাগিল। রাজধরের সাহায্য প্রার্থনা করিয়া বার বার তুরীধ্বনি উঠিল, কিন্তু তাহার উত্তর পাওয়া গেল না । সহসা কী মন্ত্রবলে সমস্ত থামিয়া গেল, যে যেখানে ছিল স্থির হইয়া দাড়াইল— আহতের আর্তনাদ ও অশ্বের হ্ষো ছাড়া আর শব্দ রহিল না । সন্ধির নিশান লইয়া লোক আসিয়াছে। মগদের রাজা পরাজয় স্বীকার করিয়াছেন। হর হর বোম্ বোম্ শৰে আকাশ বিদীর্ণ হইয়া গেল। মগ-সৈন্যগণ আশ্চর্ষ হইয়া পরস্পরের মুখ চাহিতে লাগিল । নবম পরিচ্ছেদ রাজধর যখন জয়োপহার লইয়া আসিলেন, তখন তাহার মুখে এত হাসি যে র্তাহার ছোটাে চোখ দুটা বিদুর মতে হইয়া পিট পিট করিতে লাগিল। হাতির দাতের মুকুট বাহির করিয়া ইন্দ্রকুমারকে দেখাইয়া কহিলেন, “এই দেখো, যুদ্ধের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া এই পুরস্কার পাইয়াছি।” ইন্দ্রকুমার ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন, “যুদ্ধ ? যুদ্ধ তুমি কোথায় করিলে। এ পুরস্কার তোমার নহে। এ মুকুট যুবরাজ পরিবেন।”