পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९१७ রবীন্দ্র-রচনাবলী কথা শেষ হইতে না হইতে অভিমানে ইন্দ্রকুমার ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন। ইশা খ যুবরাজকে বলিলেন, “যুবরাজ, এ মুকুট তোমার কাহাকেও দিবার অধিকার নাই। আমি সেনাপতি, এ মুকুট আমি যাহাকে দিব তাহারই হইবে।” বলিয়া ইশা খ রাজধরের মাথা হইতে মুকুট তুলিয়া যুবরাজের মাথায় দিতে গেলেন । যুবরাজ সরিয়া গিয়া বলিলেন, “ন, এ আমি গ্রহণ করিতে পারি না।” . ইশা খা বলিলেন, “তবে থাক। এ মুকুট কেহ পাইবে না।" বলিয়া পদাঘাতে মুকুট কর্ণফুলি নদীর জলে ফেলিয়া দিলেন। বলিলেন, “রাজধর যুদ্ধের নিয়ম লঙ্ঘন করিয়াছেন–রাজধর শাস্তির যোগ্য ।” দশম পরিচ্ছেদ ইন্দ্রকুমার তাহার সমস্ত সৈন্য লইয়া আহতহদয়ে শিবির হইতে দূরে চলিয়া গেলেন । যুদ্ধ অবসান হইয়া গিয়াছে। ত্রিপুরার সৈন্ত শিবির তুলিয়া দেশে ফিরিবার উপক্রম করিতেছে। এমন সময় সহসা এক ব্যাঘাত ঘটিল। ইশা খী যখন মুকুট কাড়িয়া লইলেন, তখন রাজধর মনে মনে কছিলেন, “আমি না থাকিলে তোমরা কেমন করিয়া উদ্ধার পাও একবার দেখিব।” তাহার পরদিন রাজধর গোপনে আরাকানপতির শিবিরে এক পত্র পাঠাইয়া দিলেন । এই পত্রে তিনি ত্রিপুরার সৈন্তের মধ্যে আত্মবিচ্ছেদের সংবাদ দিয়া আরাকানপতিকে যুদ্ধে আহবান করিলেন । ইন্দ্রকুমার যখন স্বতন্ত্র হইয়া সৈন্যসমেত স্বদেশাভিমুখে বহুদূর অগ্রসর হইয়াছেন এবং যুবরাজের সৈন্যেরা শিবির তুলিয়া গৃহের অভিমুখে যাত্রা করিতেছে, তখন সহসা মগের পশ্চাৎ হইতে আক্রমণ করিল—রাজধর সৈন্য লইয়া কোথায় সরিয়া পড়িলেন তাহার উদ্দেশ পাওয়া গেল না । যুবরাজের হতাবশিষ্ট তিন সহস্র সৈন্ত প্রায় তাহার চতুগুণ মগ-সৈন্ত কর্তৃক হঠাৎ বেষ্টিত হইল । ইশা খাঁ যুবরাজকে বলিলেন, “আজ আর পরিত্রাণ নাই। যুদ্ধের ভার আমার উপর দিয়া তুমি পলায়ন করে৷ ” যুবরাজ দৃঢ়স্বরে বলিলেন, “পালাইলেও তো একদিন মরিতে হইবে।” চারিদিকে চাহিয়া বলিলেন, “পালাইব বা কোথা । এখানে মরিবার যেমন সুবিধা পালাইবার তেমন স্থবিধা নাই। হে ঈশ্বর, সকলই তোমার ইচ্ছা ।” ইশা খা বলিলেন, “তবে আইস, আজ সমারোহ করিয়া মরা যাক।” বলিয়া