পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$ፃ►” ब्रशैक्ष-क्रमांबणौ ইজকুমার যুদ্ধের সমস্ত সংবাদ পাইয়া যখন যুবরাজকে খুজিতে আসিয়াছেন, তখন তিনি কর্ণফুলি নদীর তীরে ঘাসের শষ্যার উপর গুইয়া আছেন। মাঝে মাঝে অঞ্জলি পুরিয়া জলপান করিতেছেন, মাঝে মাঝে নিতান্ত অবসর হইয়া চোখ বুজিয়া আলিতেছে। দূর সমূত্রের দিক হইতে বাতাস আসিতেছে। কানের কাছে কুল কুল করিয়া নদীর জল বহিয়া আসিতেছে । জনপ্রাণী নাই । চারিদিকে বিজন পর্বত দাড়াইয়া আছে, বিজন অরণ্য বা ঝণকরিতেছে—আকাশে চন্দ্র একাকী, জ্যোৎস্নালোকে অনন্ত নীলাকাশ পাণ্ডুবৰ্ণ হইয়া গিয়াছে। এমন সময়ে ইন্দ্রকুমার যখন বিদীর্ণহারে "দাদা" বলিয়া ভাকিয়া উঠিলেন, তখন আকাশপাতাল যেন শিহরিয়া উঠিল । চন্দ্রনারায়ণ চমকিয়া জাগিয়া “এস ভাই” বলিয়া আলিঙ্গনের জন্য দুই হাত বাড়াইয়া দিলেন । ইন্দ্রকুমার দাদার আলিঙ্গনের মধ্যে বদ্ধ হইয়া শিশুর মতো কাদিতে লাগিলেন । চন্দ্রনারায়ণ ধীরে ধীরে বলিলেন, "আঃ বাচিলাম ভাই । তুমি আসিবে জানিয়াই এতক্ষণে কোনোমতে আমার প্রাণ বাহির হইতেছিল না। ইন্দ্রকুমার, তুমি আমার উপরে অভিমান করিয়াছিলে, তোমার সেই অভিমান লইয়। কি আমি মরিতে পারি। আজ আবার দেথা হইল, তোমার প্রেম আবার ফিরিয়া পাইলাম—এখন মরিতে আর কোনো কষ্ট নাই।” বলিয়া দুই হাতে র্তাহার তীর উৎপাটন করিলেন । রক্ত ছুটিয়া পড়িল, তাহার শরীর হিম হইয়া আসিল—মৃদুস্বরে বলিলেন, “মরিলাম তাহাতে দুঃখ নাই কিন্তু আমাদের পরাজয় হইল।” ইন্দ্রকুমার কাদিয়া কহিলেন, “পরাজয় তোমার হয় নাই দাদা, পরাজয় আমারই হইয়াছে।” চন্দ্রনারায়ণ ঈশ্বরকে স্মরণ করিয়া হাতজোড় করিয়া কহিলেন, “দয়াময়, তবের খেলা শেষ করিয়া আসিলাম, এখন তোমার কোলে স্থান দাও।” বলিয়া চক্ষু মুদ্রিত করিলেন । r ভোরের বেলা নদীর পশ্চিম পাড়ে চন্দ্র যখন পাণ্ডুবৰ্ণ হইয়া আসিল চন্দ্রনারায়ণের মুদ্রিতনেত্র মুখচ্ছবিও তখন পাণ্ডুবর্ণ হইয়া গেল। চন্দ্রের সঙ্গে সঙ্গেই তাহার জীবন অস্তমিত হইল । 響