পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন HHණු তুচ্ছ হয়ে আসে। সে জীবন যেন অনাবৃত—সে এবং তার বাইরের মাঝখানে কেউ যেন তাকে ঠেকাবার নেই। ক্ষতি একেবারেই তার গায়ে এসে লাগে, নিন্দ একেবারেই তার মর্মে এসে আঘাত করে, দুঃখ কোনো ভাবয়সের মাঝখান দিয়ে স্বন্দর বা মহৎ হয়ে ওঠে না । মুখ একেবারে মত্ততা এবং শোকের কারণ একেবারে মৃত্যুবাণ হয়ে এসে তাকে বাজে। এ-কথা যখন চিত্ত করে দেখি তখন সমস্ত সংকোচ মন হতে দূর হয়ে যায়—তখন ভীত হয়ে বলি, না, শৈথিলা করলে চলবে না। একদিনও ভুলব না, প্রতিদিনই তার সামনে এসে দাড়াতেই হবে, প্রতিদিন কেবল সংসারকেই প্রশ্রয় দিয়ে তাকেই কেবল বুকের সমস্ত রক্ত খাইয়ে প্রবল করে তুলে নিজেকে এমন অসহায়ভাবে একান্তই তার হাতে আপাদমস্তক সমর্পণ করে দেব না, দিনের মধ্যে অন্তত একবার এই কথাটা প্রত্যহই বলে যেতে হবে তুমি সংসারের চেয়ে বড়ো তুমি সকলের চেয়ে বড়ো | যেমন করে পারি তেমনি করেই বলব। আমাদের শক্তি ক্ষুদ্র অন্তৰ্বামী তা জানেন । কোনোদিন আমাদের মনে কিছু জাগে কোনোদিন একেবারেই জাগে ন!—মনে বিক্ষেপ আসে, মনে ছায়া পড়ে। উপাসনার যে-মন্ত্র আবৃত্তি করি প্রতিদিন তার অর্থ উজ্জল থাকে না । কিন্তু তবু নিষ্ঠ হারাব না । দিনের পর দিন এই দ্বারে এসে দাড়াব, দ্বার খুলুক আর নাই খুলুক। যদি এখানে আসতে কষ্ট বোধ হয় তবে সেই কষ্টকে অতিক্রম করেই আসব। যদি সংসারের কোনো বন্ধন মনকে টেনে রাখতে চায় তবে ক্ষণকালের জন্তে সেই সংসারকে এক পাশে ঠেলে রেখেই আসব। কিছু ন-ই জোটে যদি তবে এই অভ্যাসটুকুকেই প্রত্যহ তার কাছে এনে উপস্থিত করব। সকলের চেয়ে যেটা কম দেওয়া অন্তত সেই দেওয়াটাও তাকে দেব। সেইটুকু দিতেও ষে বাধাটা অতিক্রম করতে হয় যে জড়তা মোচন করতে হয় সেটাতেও যেন কুষ্ঠিত না হই । অত্যন্ত দরিত্রের ষে রিক্তপ্রায় দ্বান সেও যেন প্রত্যহই নিষ্ঠার সঙ্গে তার কাছে এনে দিতে পারি। ষাকে সমস্ত জীবন উংসর্গ করবার কথা, দিনের সকল কর্মে সকল চিন্তায় যাকে রাজ করে বসিয়ে রাখতে হবে, তাকে কেবল মুখের কথা দেওয়া, কিন্তু তাও দিতে হবে। আগাগোড়া সমস্তই কেবল সংসারকে দেব আর তাকে কিছুই দেব না, তাকে প্রত্যেক দিনের মধ্যে একান্তই "না” করে রেখে দেব, এ তে কোনোমতেই হতে পারে না । । . . দিনের আরম্ভে প্রভাতের অরুণোদয়ের মাঝখানে দাড়িয়ে এই কথাটা একবার স্বীকার করে যেতেই হবে যে, পিতা লোহলি—তুমি পিত, আছ । আমি স্বীকাৰ করছি তুমি পিতা। আমি স্বীকার করছি তুমি আছ। একবার বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডের মাঝখানে