পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীক্স-রচনাবলী سوي (6م জগতে কোথাও থাকে তবে সে গাছের ফলে। নিজের কর্মের রূপটিকে নিজের জীবনের পরিণামকে যেন ফলের মধ্যে আমরা চক্ষে প্রত্যক্ষ দেখতে পাই । ফল জিনিসটা সমগ্র গাছের শেষ লক্ষ্য—পরিণত মানুষটি তেমনি সমস্ত সংসার বৃক্ষের শেষলাভ। কিন্তু মানুষের পরিণতি যে আরম্ভ হয়েছে তার লক্ষণ কী ? একটি আমফল যে পাকছে তারই বা লক্ষণ কী ? সব প্রথমে দেখা যায়, তার বাইরে একটা প্রান্তে একটু রং ধরতে আরম্ভ করেছে, তার তামবৰ্ণ ঘূচবে ঘুচবে করছে—সোনা হয়ে ওঠবার চেষ্টা। *. আমাদের ৪ ভিতরে যখন পরিণতি আরম্ভ হয় বাইরে তার দীপ্তি দেখা দেয়। কিন্তু সব জায়গায় সমান নয়, কোথাও কালো কোথাও সোনা । তার সকল কাজ সকল ভাব সমান উজ্জলতা পায় না, কিন্তু এখানে-ওখানে যেন জ্যোতি দেখা দিতে থাকে। নিজের পাতারই সঙ্গে ফলের ষে বর্ণসাদৃপ্ত ছিল সেটা ক্রমশ ঘুচে আসতে থাকে, চারিদিকে আকাশের আলোর যে রং সেই রঙের সঙ্গেই তার মিলন হয়ে আসে। যে গাছে তার জন্ম সেই গাছের সঙ্গে নিজের রঙের পার্থক্য সে আর কিছুতেই সংবরণ করতে পারে না—চারিদিকের নিবিড় শু্যামলতার আচ্ছাদন থেকে সে বাহিরের আকাশে প্রকাশ পেয়ে উঠতে থাকে । তার পরে তার বাহিরটি ক্রমশই কোমল হয়ে আসে। আগে বড়ো শক্ত জাট ছিল কিন্তু এখন আর সে কঠোরতা নেই। দীপ্তিময় মুগন্ধময় কোমলতা। পূর্বে তার যে-রস ছিল সে-রসে তীব্র আমতা ছিল এখন সমস্ত মাধুর্ষে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। অর্থাং এখন তার বাইরের পদার্থ সমস্ত বাইরেরই হয়, সকলেরই ভোগের হয়, সকলকে আহবান করে কাউকে ঠেকাতে চায় না। সকলের কাছে সে কোমল সুন্দর হয়ে ওঠে। গভীরতর সার্থকতার অভাবেই মানুষের তীব্রত কঠিনতা এমন উগ্রভাবে প্রকাশ পায়—সেই আনন্দের দৈন্তেই তার দৈন্য, সেইজন্যেই সে বাহিরকে আঘাত করতে উদ্যত হয় । o তার পরে তার ভিতরকার যেটি আসল জিনিস, তার আঁটি—যেটিকে বাইরে দেখাই যায় না, তার সঙ্গে তার বাহিরের অংশের একটা বিশ্লিষ্টত ঘটতে থাকে। সেটা যে তার নিত্যপদার্থ নয় তা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে আসে। তার শশু অংশের সঙ্গে তার ছালট পৃথক হতে থাকে, ছাল অনায়াসে শাল থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া যায়, আবার তার শাসও আঁটি থেকে সম্পূর্ণ ছাড়িয়ে ফেলা সহজ হয়। তার বোট এতদিন গাছকে অঁাকড়ে ছিল, তাও অলগা হয়ে আসে । গাছের সঙ্গে নিজেকে সে আর অভ্যন্ত এক