পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

भोक्लिनिहुक७म \ מ"ש9ו নদীর ধারাটা চিরন্তন । সে পর্বতের গুহা থেকে নিঃস্থত হয়ে সমূত্রের অতলের মধ্যে প্রবেশ করছে। সে যে-ক্ষেত্রের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সেই ক্ষেত্র থেকে উপকরণরাশি তার গতিবেগে আহরিত হয়ে চর বেঁধে উঠছে—কোথাও জুড়ি, কোথাও বালি, কোথাও মাটি জমছে, তার সঙ্গে নানা দেশের কত ধাতুকণা এবং জৈব পদার্থ এসে মিলছে । এই চর কতবার ভাঙছে, কতবার গড়ছে, কত স্থান ও আকার পরিবর্তন করছে । এর কোথাও বা গাছপাল| উঠছে, কোথাও বা মরুভূমি । কোথাও জলাশয়ে পাখি চরছে কোথাও বা বালির উপর কুমিরের ছানা হা করে পড়ে রোদ পোয়াচ্ছে । এই চিরপরিবর্তনশীল চরগুলিই যদি একান্ত প্রবল হয়ে ওঠে তাহলেই নদীর চিরন্তন ধারা বাধা পায়। ক্রমে ক্রমে নদী হয়ে পড়ে গৌণ, চরই হয়ে পড়ে মুখ্য । শেষকালে ফন্তুর মতো নদীটা একেবারেই আচ্ছন্ন হয়ে যেতে পারে। আত্মা সেই চিরস্রোত নদীর মতো । অনাদি তার উৎপত্তিশিখর, অনন্ত তার সঞ্চারক্ষেত্র। আনন্দই তাকে গতিবেগ দিয়েছে, সেই গতির বিরাম নেই। এই আত্মা যে-দেশ দিয়ে যে-কাল দিয়ে চলেছে তার গতিবেগে সেই দেশ ও সেই কালের নানা উপকরণ সঞ্চিত হয়ে তার একটি সংস্কাররূপ তৈরি হতে থাকে—এই জিনিসটি কেবলই ভাঙছে, গড়ছে, কেবলই আকার পরিবর্তন করছে । কিন্তু স্বষ্টি কোনো কোনো অবস্থায় স্থষ্টিকর্তাকে ছাপিয়ে উঠতে পারে। আত্মাকেও তার দেশকালজাত অহং প্রবল হয়ে উঠে অবরুদ্ধ করতে পারে। এমন হতে পারে অহংটাকেই তার স্ত,পাকার উপকরণসমেত দেখা যায়, আত্মাকে আর দেখা যায় না। অহং চারিদিকেই বড়ো হয়ে উঠে আত্মাকে বলতে থাকে—তুমি চলতে পাবে না, তুমি এইখানেই থেকে যাও; তুমি এই ধন-দৌলতেই থাকে, এই ঘরবাড়িতেই থাকে, এই খ্যাতি প্রতিপত্তিতেই থাকো । যদি আত্মা আটকা পড়ে তবে তার স্বরূপ ক্লিষ্ট হয়, তার স্বভাব নষ্ট হয়। সে তার গতি হারায় । অনন্তের মুখে সে আর চলে না, সে মজে যায়, সে মরতে থাকে । আত্মা দেশকালপাত্রের মধ্যে দিয়ে নানা উপকরণে এই ষে নিজের উপকূল রচনা করতে থাকে তার প্রধান সার্থকতা এই যে, এই কুলের দ্বারাই তার গতি সাহায্যপ্রাপ্ত হয়। এই স্কুল না থাকলে সে ব্যাপ্ত হয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে অচল হয়ে থাকত। অহং লোকে লোকাস্তরে আত্মার গতিবেগকে বাড়িয়ে তার গতিপথকে এগিয়ে নিয়ে চলে । উপকূলই নদীর সীমা এবং নদীর রূপ—অহংই আত্মার সীমা আত্মার রূপ। এই রূপের