পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శ్రీూS রবীশ্র-রচনাবলী সেই ধর্ম পরিপূর্ণ কেননা তিনি শুদ্ধং অপাপবিদ্ধং । তিনি নির্বিকার, তাতে পাপের কোনো বাধা নেই। সেইজন্তে সর্বত্রই তার প্রবেশ । পাপের বন্ধন মোচন করলে আমাদেরও প্রবেশ অব্যাহত হবে । তখন আমরা কী হব ? পরমাত্মার মতো সেই স্বরূপটি লাভ করব যে স্বরূপে তিনি কবি, মনীষী, প্রভূ, স্বয়ম্ভ আমরাও আনন্দময় কবি হব, মনের অধীশ্বর হব, দাসত্ব থেকে মুক্ত হব, জাপন নির্মল আলোকে আপনি প্রকাশিত হব । তখন আত্মা সমস্ত চিন্তায় বাক্যে কর্মে আপনাকে শাস্তম্ শিবম্ অদ্বৈতম্রূপে প্রকাশ করবে—আপনাকে ক্ষুব্ধ করে লুব্ধ করে থওৰিখণ্ডিত করে দেখাবে না। মৈত্রেয়ীর প্রার্থনাও সেই প্রকাশের প্রার্থনা। যে-প্রার্থনা বিশ্বের সমস্ত কুঁড়ির মধ্যে, কিশলয়ের মধ্যে, যে-প্রার্থনা দেশকালের অপরিতৃপ্ত গভীরতার মধ্য হতে নিয়ত উঠছে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রত্যেক অণুতে পরমাণুতে যে-প্রার্থনা, যে-প্রার্থনার যুগযুগান্তরব্যাপী ক্রদনে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলেই বেদে এই অন্তরীক্ষকে ক্ৰন্দলী রোদলী বলেছে সেই মানবাত্মার চিরন্তন প্রার্থনাই মৈত্রেয়ীর প্রার্থনা । আমাকে প্রকাশ করে, আমাকে প্রকাশ করে । আমি আসত্যে আচ্ছন্ন আমাকে সত্যে প্রকাশ করে । আমি অন্ধকারে আবিষ্ট আমাকে জ্যোতিতে প্রকাশ করে, আমি মৃত্যুর দ্বারা আবিষ্ট আমাকে অমৃতে প্রকাশ করে। হে আবিঃ, হে পরিপূর্ণ প্রকাশ, তোমার মধ্যেই আমার প্রকাশ হ’ক, আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ কোনো বাধা না পাক—সেই প্রকাশ নিমুক্ত হলেই তোমার দক্ষিণ মুখের জ্যোতিতে আমি চিরকালের জন্তে রক্ষা পাব। সেই প্রকাশের বাধাতেই তোমার অপ্রসন্নত । বুদ্ধ সমস্ত মানবের হয়ে নিজের জীবনে এই পরিপূর্ণ প্রকাশের প্রার্থনাই করেছিলেন—এ ছাড়া মাহুষের আর দ্বিতীয় কোনো প্রার্থনাই নেই। ৯ চৈত্র সাধন আমরা অনেকেই প্রতিদিন এই বলে আক্ষেপ করছি যে, আমরা ঈশ্বরকে পাচ্ছি নে কেন ? আমাদের মন বসছে না কেন ? আমাদের ভাব জমছে না কেন ? i সে কি আমনি হবে, আপনি হয়ে উঠবে ? এতবড়ো লাভের খুব একটা বড়ো সাধনা নেই কি ? ঈশ্বরকে পাওয়া বলতে কতখানি বোঝায় তা ঠিকমতো জানলে এ সম্বন্ধে বৃথা চঞ্চলত অনেকটা দূর হয়।