পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

482 e রীশ্র-রচনাবলী আত্মসমপণ তাই বলছিলুম, ব্রন্ধকে ঠিক পাওয়ার কথাটা বলা চলে না। কেননা তিনি তো আপনাকে দিয়েই বসে আছেন—তার তো কোনোখানে কমতি নেই- এ কথা তো বলা চলে না যে, এই জায়গায় তার অভাব আছে অতএব আর-এক জায়গায় তাকে খুজে বেড়াতে হবে। অতএব ব্রন্ধকে পেতে হবে এ-কথাটা বলা ঠিক চলে না—আপনাকে দিতে হবে বলতে হবে। ওইখানেই অভাব আছে—সেইজন্তেই মিলন হচ্ছে না। তিনি আপনাকে দিয়েছেন আমরা আপনাকে দিই নি । আমরা নানা প্রকার স্বার্থের অহংকারের ক্ষুদ্রতার বেড়া দিয়ে নিজেকে অত্যন্ত স্বতন্ত্র, এমন কি, বিরুদ্ধ করে রেখেছি। এইজন্যই বুদ্ধদেব এই স্বাতন্ত্র্যের অতি কঠিন বেষ্টন নানা চেষ্টায় ক্রমে ক্রমে ক্ষয় করে ফেলবার উপদেশ করেছেন । এর চেয়ে বড়ো সত্তা বড়ো আনন্দ যদি কিছুই না থাকে তাহলে এই ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্য নিরস্তর অভ্যাসে নষ্ট করে ফেলবার কোনো মানে নেই। কারণ, কিছুই যদি না থাকে তাহলে তো আমাদের এই অহং এই ব্যক্তিগত বিশেষত্বই একেবারে পরম লাভ—তাহলে একে অঁাকড়ে না রেখে এত করে নষ্ট করব কেন ? কিন্তু আসল কথা এই যে, যিনি পরিপূর্ণরূপে নিজেকে দান করেছেন আমরাও তার কাছে পরিপূর্ণরূপে নিজেকে দান না করলে তাকে প্রতিগ্রহ করাই হবে না। আমাদের দিকেই বাকি আছে। তার উপাসনা তাকে লাভ করবার উপাসনা নয়—আপনাকে দান করবার উপাসনা । দিনে দিনে ভক্তি দ্বারা ক্ষমা দ্বারা সন্তোষের দ্বারা সেবার দ্বারা তার মধ্যে নিজেকে মঙ্গলে ও প্রেমে বাধাহীনরপে ব্যাপ্ত করে দেওয়াই তার উপাসনা । অতএব আমরা যেন না বলি যে তাকে পাচ্ছি নে কেন, আমরা যেন বলতে পারি র্তাকে দিচ্ছি নে কেন ? আমাদের প্রতিদিনের আক্ষেপ হচ্ছে এই যে— আমার বা আছে জামি, সকল দিতে পারি নি তোমায়ে মাখ। আমার লাজ ভয়, আমার মান জপমান श्रृंथ छूथ छांदनी । দাও দাও দাও, সমস্ত ক্ষয় করে, সমস্ত খৰচ করে ফেলে, তাহলেই পাওয়াতে একেবারে পূর্ণ হয়ে উঠবে।