পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

भोलिमिएकडम . 8›ቁ তাই বলছিলুম কী জ্ঞানে কী প্রেমে কী কর্মে সেই এককে সেই আসল জিনিসটিকে পেলেই সমস্তই সহজ হয়ে যায়—জিনিসের সমস্ত ভার এক মুহূর্তে লাঘব হয়ে যায়। সাতারটি যেমনি জেনেছি আমনি অগাধ জলে বিহারও আমার পক্ষে যেন স্বাভাবিক হয়ে যায়, তখন অতল জলে ডুব দিলেও বিনাশে তলিয়ে যাই নে, আপনি ভেসে উঠি । এই সাতারটি না জানলেই জল প্রতিপদে আমাকে বাধা দেয় আমাকে মারতে চায়। যে জলে সঞ্চরণ সাতার জানলে আমার পক্ষে লীলা আমার পক্ষে আনন্দ, সাতার না জানলে সেই জলে সঞ্চরণই আমার পক্ষে দুঃখ আমার পক্ষে মৃত্যু। তখন অল্প জলেও হাত-পা ছুড়ে হাসফাস করে ক্লাস্ত হয়ে পড়ি। আমাদের আসল জানবার বিষয়কে পাবার বিষয়কে যেমনি লাভ করি আমনি এই সংসারের বিচিত্রতা আর আমাদের বাধতে পারে না, ঠেকাতে পারে না, মারতে পারে না। তখন, পূর্বে যা বিভীষিকা ছিল এখন সেইটেই সহজ হয়ে যায়–সংসারে তখন আমরা মুক্তভাবে আনন্দ পাই। সংসার তখন আমাদের অধিকার করে না, আমরাই সংসারকে অধিকার করি । তখন, পূর্বে পদে পদে আমাদের যে আক্ষেপ বিক্ষেপ যে-শক্তির অপব্যয় ছিল সেটা কেটে যায়। সেইজন্যই উপনিষং বলেছেন, তে সর্বগং সর্বত: প্রাপ্য ধীর যুক্তাত্মান: সর্বমেবাবিশস্তি, সেই সর্বব্যাপীকে যারা সকল দিক থেকেই পেয়েছেন তারা ধীর হয়ে যুক্তাত্মা হয়ে সর্বত্রই প্রবেশ করেন। প্রথমে তারা ধৈর্য লাভ করেন, আর তারা নানা বিষয় ও নানা ব্যাপারের মধ্যে কেবলই বিক্ষিপ্ত হয়ে উদভ্ৰান্ত হয়ে বেড়ান না, তার অপ্ৰগলভ অপ্ৰমত্ত ধীর হন । তার যুক্তাত্মা হন, সেই পরম একের সঙ্গে যোগযুক্ত হন। নিজেকে কোনো অহংকার কোনো আসক্তি দ্বারা স্বতন্ত্র বিচ্ছিন্ন করেন না, একের সঙ্গে মিলিত হয়ে আনন্দে বিশ্বের সমস্ত বহুর মধ্যে প্রবেশ করেন, সমস্ত বহু তখন তাদের পথ ছেড়ে দেয় । সেই সকল ধীর সেই সকল যুক্তাত্মাদের প্রণাম করে তাদেরই পথ আমরা অনুসরণ করব । সেই হচ্ছে একের সঙ্গে যোগের পথ, সেই হচ্ছে সকলের মধ্যেই প্রবেশের পথ, জ্ঞান প্রেম এবং কর্মের চরম পরিতৃপ্তির পথ । રર જ્ઞ