পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

83.ఆ রবীন্দ্র-রচনাবলী পিতার দিক থেকে কেবল ষে আমাদের দিকে প্রাণ প্রবাহিত হচ্ছে তা নয় । তার দিক থেকে আমাদের দিকে অবিশ্রাম প্রেম সঞ্চারিত হচ্ছে । আমাদের মধ্যে কেবল যে একটা চেষ্টা আছে গতি আছে তা নয়, একটা আনন্দ আছে । আমরা কেবল বেঁচে আছি কাজ করছি নয়, আমরা ধ্বস পাচ্ছি। আমাদের দেখায় শোনায়, আহারে বিহারে, কাজে কর্মে, মানুষের সঙ্গে নানাপ্রকার যোগে নানা মুখ নানা প্রেম । এই রসটি কোথা থেকে পাচ্ছি ? এইটিই কি আমাদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন ? এটা কেবল আমার এই একটি ছোটো কারখানাঘরের সুড়ঙ্গের মধ্যে অন্ধকারে তৈরি হচ্ছে ? তা নয়। বিশ্বভূবনের মধ্যে সমস্তকে পরিপূর্ণ করে তিনি আনন্দিত। জলে স্থলে আকাশে তিনি আনন্দময়। র্তার সেই আনন্দকে সেই প্রেমকে তিনি নিয়তই প্রেরণ করছেন, সেইজন্তেই আমি বেঁচে থেকে আনন্দিত, কাজ করে আনন্দিত, জেনে আনন্দিত, মানুষের সঙ্গে নানা সম্বন্ধে আনন্দিত। তারই প্রেমের তরঙ্গ আমাকে কেবলই স্পর্শ করছে, আঘাত করছে, সচেতন করছে। এই ষে অহোরাত্র সেই ভূমার প্রেম নানা বর্ণে গন্ধে গীতে নানা স্নেহে সখ্যে শ্রদ্ধায় জোয়ারের বেগের মতো আমাদের মধ্যে এসে পড়ছে, এই বোধের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যেন আমরা বলি, ওঁ পিতা নোহসি । কেবলই তিনি প্রাণে ও প্রেমে আমাকে ভরে দিচ্ছেন, এই অনুভূতিটি যেন আমরা না হারাই । এই অনুভূতি ধাদের কাছে অত্যন্ত উজ্জল ছিল তারাই বলেছেন—কোহেবান্তাৎ কঃ প্রাণ্যাং যদেয আকাশ আনন্দো ন স্তাং । এযোহেবানন্দয়াতি। কেই বা কিছুমাত্র শরীরচেষ্টা প্রাণের চেষ্টা করত। আকাশে যদি আনন্দ না থাকতেন । এই আনন্দই সকলকে আনন্দ দিচ্ছেন। રr :' ভয় ও আনন্দ ওঁ পিতা নোহসি এই মন্ত্রে দুটি ভাবের সামঞ্জস্ত আছে। এক দিকে পিতার সঙ্গে পুত্রের সাম্য আছে। পুত্রের মধ্যে পিতা আপনাকেই প্রকাশ করেছেন। আর এক দিকে পিতা হচ্ছেন বড়ো, পুত্র ছোটো। .” এক দিকে অভেদের গৌরব, আর-এক দিকে ভেদের প্ৰণতি । পিতার সঙ্গে অভেদ নিয়ে আমরা আনন্দ করতে পারি কিন্তু স্পধর্ণ করতে পারি নে। আমার যেখানে সীমা আছে সেখানে মাথা নত করতে হবে। " ; . . .