পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিন্দুমাত্রে স্থৰ্বকিরণ সংহত হয়ে পড়লে সেখানে জাগুন জলে ওঠে, কিন্তু সেই স্বৰ্যকিরণ যখন আকাশের সর্বত্র স্বভাবত ছড়িয়ে থাকে তখন সে তাপ দেয় বটে কিন্তু দগ্ধ করে না। কালিদাস বসন্ত-প্রকৃতির সর্বব্যাপী যৌবনলীলার মাৰখানে হরপার্বতীর মিলনচাঞ্চল্যকে নিবিষ্ট করে তার সন্ত্রম রক্ষা করেছেন । কালিদাস পুষ্পধন্থর জ্য-নিৰ্ঘোষকে বিশ্বসংগীতের স্বরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ও বেস্বরে করে বাজান নি। যে-পটভূমিকার উপরে তিনি তার ছবিটি একেছেন সেটি তরুলতা পশুপক্ষীকে নিয়ে সমস্ত আকাশে অতি বিচিত্রবর্ণে বিস্তারিত। কেবল তৃতীয় সর্গ নয় সমস্ত কুমারসম্ভব কাব্যটিই একটি বিশ্বব্যাপী পটভূমিকার উপরে অঙ্কিত। এই কাব্যের ভিতরকার কথাটি একটি গভীর এবং চিরন্তন কথা। যে পাপ দৈত্য প্রবল হয়ে উঠে হঠাৎ স্বৰ্গলোককে কোথা থেকে ছারখার করে দেয় তাকে পরাভূত করবার মতো বীরত্ব কোন উপায়ে জন্মগ্রহণ করে । এই সমস্তাটি মানুষের চিরকালের সমস্তা। প্রত্যেক লোকের জীবনের সমস্তাও এই বটে আবার এই সমস্ত সমস্ত জাতির মধ্যে নূতন নূতন মূর্তিতে নিজেকে প্রকাশ করে । 唱 কালিদাসের সময়েও একটি সমস্ত ভারতবর্ষে অত্যন্ত উৎকট হয়ে দেখা দিয়েছিল তা কবির কাব্য পড়লেই স্পষ্ট বোঝা যায়। প্রাচীনকালে হিন্দুসমাজে জীবনযাত্রায় যে একটি সরলতা ও সংযম ছিল তখন সেটি ভেঙে এসেছিল । রাজারা তখন রাজধর্ম বিশ্বত হয়ে আত্মমুখপরায়ণ ভোগী হয়ে উঠেছিলেন। এদিকে শকদের আক্রমণে ভারতবর্ষ তখন বারংবার দুৰ্গতি প্রাপ্ত হচ্ছিল । তখন বাহিরের দিক থেকে দেখলে ভোগবিলাসের আয়োজনে, কাব্য সংগীত শিল্পকলার আলোচনায় ভারতবর্ষ সভ্যতার প্রকৃষ্টতা লাভ করেছিল। কালিদাসের কাব্যকলার মধ্যেও তখনকার সেই উপকরণবহুল সম্ভোগের স্বর ষে বাজে নি তা নয় । বস্তুত তার কাব্যের বহিরংশ তখনকার কালেরই কারুকার্বে খচিত হয়েছিল । এই রকম একদিকে তখনকার কালের সঙ্গে তখনকার কবির যোগ জাম্বৱা দেখতে পাই । o কিন্তু এই প্রমোভবনের স্বর্ণখচিত অন্তঃপুরে মাঝখানে বলে কাৰ্যলম্বী বৈরাগ্যবিকলচিত্তে কিসের ধ্যানে নিযুক্ত ছিলেন ? : হৃদয় তো তার এখানে ছিল না। তিনি এই আশ্চর্ষ কারুবিচিত্র মাণিক্যকঠিন কারাগার হতে কেবলই মুক্তিকামনা করছিলেন । । & o '. কালিদাসের কাব্যে বাহিরের সঙ্গে ভিতরে, অবস্থার সঙ্গে জাকাজার একটা

  • i