পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দান করে তাকে বিশ্বস্বরের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছে। আর সন্ধ্যামেঘের মতো কিম্প রুষ-পর্বত যে হেমকূট, যেখানে স্বরাস্করগুরু মরীচি র্তার পত্নীর সঙ্গে মিলে তপস্যা করছেন, লতাজালজড়িত ষে হেমকূট পক্ষিনীড়খচিত অরণ্যজটামণ্ডল বহন করে যোগাসনে অচল শিবের মতো স্বর্ষের দিকে তাকিয়ে ধ্যানময়, যেখানে কেশর ধরে সিংহশিশুকে মাতার স্তন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যখন চুরম্ভ তপস্বিবালক তার সঙ্গে খেলা করে তখন পশুর সেই দুঃখ ঋষিপত্নীর পক্ষে অসহ্য হয়ে ওঠে,—সেই তপোবন শকুন্তলার অপমানিত বিচ্ছেদদুখকে অতি বৃহৎ শাস্তি ও পবিত্রতা দান করেছে । একথা স্বীকার করতে হবে প্রথম তপোবনটি মর্ত্যলোকের, আর দ্বিতীয়টি অযুতলোকের। অর্থাৎ প্রথমটি হচ্ছে যেমন হয়ে থাকে, দ্বিতীয়টি হচ্ছে যেমন হওয়া ভালো । এই "যেমন-হওয়া-ভালো’র দিকে “যেমন-হয়ে-থাকে” চলেছে। এরই দিকে চেয়ে সে আপনাকে শোধন করছে, পূর্ণ করছে। “যেমন-হয়ে-থাকে” হচ্ছেন সতী অর্থাৎ সত্য, আর "যেমন-হওয়া-ভালো” হচ্ছেন শিব অর্থাৎ মঙ্গল । কামনা ক্ষয় করে তপস্যার মধ্য দিয়ে এই সতী ও শিবের মিলন হয়। শকুন্তলার জীবনেও "যেমন-হুয়েথাকে- তপস্তার দ্বারা অবশেষে “যেমন-হওয়া-ভালো’র মধ্যে এসে আপনাকে সফল করে তুলেছে। দুঃখের ভিতর দিয়ে মর্ত্য শেষকালে স্বর্গের প্রান্তে এসে উপনীত হয়েছে । মানসলোকের এই ষে দ্বিতীয় তপোবন এখানেও প্রকৃতিকে ত্যাগ করে মানুষ স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে নি। স্বর্গে ধাবার সময় যুধিষ্ঠির তার কুকুরকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। প্রাচীন ভারতের কাব্যে মানুষ যখন স্বর্গে পৌছোয় প্রকৃতিকে সঙ্গে নেয়, বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজে বড়ো হয়ে ওঠে না। মরীচির তপোবনে মাহুষ যেমন তপস্বী হেমকূটও তেমনি তপস্বী, সিংহও সেখানে হিংসা ত্যাগ করে, গাছপালাও সেখানে ইচ্ছাপূর্বক প্রার্থীর অভাব পূরণ করে। মানুষ এক নয়, নিখিলকে নিয়ে সে সম্পূর্ণ, অতএব কল্যাণ যখন আবিভূতি হয় তখন সকলের সঙ্গে যোগেই তার আবির্ভাব । রামায়ণে রামের বনবাস হল । কেবল স্বাক্ষলের উপন্দ্রব ছাড়া সে বনবাসে তাদের আর কোনো দুঃখই ছিল না। তারা বনের পর বন, নদীর পর নদী, পর্বতের পর