পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন । sva ভোগবিলাসে তার অরুচি জয়ে গিয়েছিল এবং তার ভক্তিবৃত্তি নিজের চরিতীৰ্থত অন্বেষণ করছিল, কেবল এই কথাটুকুই সম্পূর্ণ সত্য নয়। কারণ ভক্তিবৃত্তিকে ফুলিয়ে রাখবার আয়োজন কি তার ঘরের মধ্যেই ছিল না ? ৰে দিদিমার সঙ্গে তিনি ছায়ার মতো সর্বদা ঘুরে বেড়াতেন তিনি জপতপ দানধ্যান পূজা-অৰ্চনা নিয়েই তো দিন কাটিয়েছেন, তার সমস্ত ক্রিয়াকলাপেই শিশুকাল থেকেই মহর্ষি তার সঙ্গের সঙ্গী ছিলেন । যখন বৈরাগ্য উপস্থিত হল, যখন ধর্মের জন্ত তার ব্যাকুলত জন্মাল তখন এই অভ্যস্ত পথেই তার সমস্ত মন কেন ছুটে গেল না ? ভক্তিবৃত্তিকে ব্যাপৃত করে রাখবার উপকরণ তো তার খুব নিকটেই ছিল । তার ভক্তিকে যে এইদিকে তিনি কখনো নিয়োজিত করেন নি তা নয় । তিনি যখন বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে যেতেন পথিমধ্যে দেবীমন্দিরে ভক্তিভরে প্রণাম করতে জুলতেন না ; তিনি একবার এত সমারোহে সরস্বতীর পূজা করেছিলেন যে সেবার পূজার দিনে শহরে গাদাফুল দুর্লভ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু যেদিন শ্মশানঘাটে পূর্ণিমার রাতে র্তাৱ চিত্ত জাগ্রত হয়ে উঠল সেদিন এই সকল চিরাভ্যস্ত পথকে তিনি পথ বলেই লক্ষ্য করলেন না। তার তৃষ্ণার জল যে এদিকে নেই তা বুঝতে র্তাকে চিন্তামাত্র করতে হয় নি । তাই বলছিলুম, ভক্তিকে বাইরের দিকে নিয়োজিত করে তিনি নিজেকে ফাকি দিতে পারেন নি। অন্তঃপুরে তার ডাক পড়েছিল। তিনি জগতের মধ্যেই জগদীশ্বরকে, অন্তরাত্মার মধ্যেই পরমাত্মাকে দর্শন করতে চেয়েছিলেন। তাকে আর কিছুতে ভূলিয়ে রাখে কার সাধ্য! যারা নানা ক্রিয়াকর্মে আপনাকে ব্যাপৃত রাখতে চায় তাদের নানা উপায় আছে, যারা ভক্তির মধুর রসকে আস্বাদন করতে চায় তাদেরও অনেক উপলক্ষ্য মেলে । কিন্তু যারা একেবারে তাকেই চেয়ে বসে, তাদের তো ওই একটি বই আর দ্বিতীয় কোনো পন্থা নেই। তারা কি আর বাইরে ঘুরে বেড়াতে পারে ? তাদের সামনে কোনো রঙিন জিনিস সাজিয়ে তাদের কি কোনোমতেই জুলিয়ে রাখা যায় ? নিখিলের মধ্যে এবং আত্মার মধ্যে তাদের প্রবেশ করতেই হবে । কিন্তু এই অধ্যাত্মলোকের এই বিশ্বলোকের মন্দিরের পথ তার চারদিকে যে লপ্ত হয়ে গিয়েছিল। অন্তরের ধনকে দূরে সন্ধান করবার প্রণালীই যে সমাজে চারিদিকে প্রচলিত ছিল, এই নির্বাসনের মধ্যে থেকেই তো তার সমস্ত প্রাণ কেঁদে উঠেছিল। তার জাখ ষে-জাপ্রয় চাচ্ছিল, সে শাশ্রয় বাইরের খণ্ডতার রাজ্যে সে কোথায় খুঁজে পাৰে ? j *