পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

外呜页 SS যে, বালিকার খেলা ঘুরিয়া যায় ও মালা গাথা সাঙ্গ হয় বুঝি- বালিকার আর বুঝি পাখির সহিত গান १ा७शा श्शा ७ले ना । মূল কথাটা এই, নরেন্দ্র ও করুণায় কখনােই বনিতে পারে না। দুইজনে দুই বিভিন্ন উপাদানে নির্মিত। নরেন্দ্র করুণার সেই ভালোবাসার কত কী অসংলগ্ন কথার মধ্যে কিছুই মিষ্টতা পাইতনা, তাহার সেই প্ৰেমে-মাখানো অতৃপ্ত স্থির দৃষ্টি-মধ্যে ঢলঢল লাবণ্য দেখিতে পাইত না, তাহার সেই উচ্ছসিত নিঝরিণীর ন্যায় অধীর সৌন্দর্যের মিষ্টতা নরেন্দ্র কিছুই বুঝিত না । কিন্তু সরলা করুণা, সে অত কী বুঝিবে ! সে ছেলেবেলা হইতেই নরেন্দ্রের গুণ ছাড়া দোষের কথা কিছুই শুনে নাই। কিন্তু করুণার একি দায় হইল। তাহার কেমন কিছুতেই আশ মিটে না, সে আশ মিটাইয়া নরেন্দ্ৰকে দেখিতে পায় না, সে আশ মিটাইয়া মনের সকল কথা নরেন্দ্ৰকে বলিতে পারে না- সে সকল কথাই বলে অথচ মনে করে যেন কোনো কথাই বলা হইল না । একদিন নরেন্দ্ৰকে বেশ পরির্তন করিতে দেখিয়া করুণা জিজ্ঞাসা করিল, “কোথায় যাইতেছ।” নরেন্দ্ৰ কহিলেন, “কলিকাতায় ।” করুণা ৷ কলিকাতায় কেন যাইবে । নরেন্দ্র ভুকুঞ্চিত করিয়া দেয়ালের দিকে মুখ ফিরাইয়া কহিল, “কাজ না থাকিলে কখনাে যাইতাম " একটা বিড়ালশাৱক ছুটিয়া গেল। করুণা তাহাকে ধরিতে গেল, অনেকক্ষণ ছুটািছুটি করিয়া ধরিতে পারিল না। অবশেষে ঘরে ছুটিয়া আসিয়া নরেন্দ্রের কাধে হাত রাখিয়া কহিল, “আজ যদি তােমাকে কলিকাতায় যাইতে না দিই ?” নরেন্দ্ৰ কঁধি হইতে হাত ফেলিয়া দিয়া কহিল, “সরো, দেখো দেখি, আর একটু হলেই ডিক্যানটারটি ভাঙিয়া ফেলিতে আর কি ৷” করুণা। দেখো, তুমি কলিকাতায় যাইয়ে না। পণ্ডিতমহাশয় তোমাকে যাইতে দিতে নিষেধ করেন । নরেন্দ্র কিছুই উত্তর না দিয়া শিস দিতে দিতে চুল আঁচড়াইতে লাগিলেন। করুণা ছুটিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল ও এক শিশি এসেন্স আনিয়া নরেন্দ্রের চাদরে খানিকটা ঢালিয়া দিল । নরেন্দ্ৰ কলিকাতায় চলিয়া গেলেন। করুণা দুই একবার বারণ করিল, কিছু হাঁ ই না দিয়া লক্ষেী ঠুংরি গাইতে গাইতে নরেন্দ্ৰ প্ৰস্থান করিলেন । যতক্ষণ নরেন্দ্রকে দেখা যায় করুণা চাহিয়া রহিল। নরেন্দ্ৰ চলিয়া গেলে পর সে বালিশে মুখ লুকাইয়া কঁাদিল । কিয়ৎক্ষণ কঁদিয়া মনের বেগ শান্ত হইতেই চােখের জল মুছিয়া ফেলিয়া পাখিটি হাতে করিয়া লইয়া অন্তঃপুরের বাগানে মালা গাঁথিতে বসিল । বালিকা স্বভাবত এমন প্ৰফুল্লাহৃদয় যে, বিষাদ অধিকক্ষণ তাহার মনে তিষ্ঠিতে পারে না। হাসির লাবণ্যে তাহার বিশাল নেত্র দুটি এমন মগ্ন যে রোদনের সময়ও অশ্রুর রেখা ভেদ করিয়া হাসির কিরণ জ্বলিতে থাকে। যাহা হউক, করুণার চপল ব্যবহারে পাড়ার মেয়েমহলে বেহায়া বলিয়া তাহার বড়োই মুখ্যাতি জন্মিয়াছিল- "বুড়াধাড়ি মেয়ের অতটা বাড়াবাড়ি তাহাদের ভালাে লাগিত না। এ-সকল সন্দার কথা করুণা বাড়ির পুরাতন দাসী ভবির কাছে সব শুনিতে পাইত। কিন্তু তাহাতে তাহার আইল গল কী ? সে তেমনি ছুটাছুটি করিত, সে ভবির গলা ধরিয়া তেমনি করিয়াই হাসিত, সে পাখির কাছে মুখ নাড়িয়া তেমনি করিয়াই গল্প করিত। কিন্তু এই প্ৰফুল্ল হৃদয় একবার যদি বিষাদের আঘাতে ঈঙিয়া যায়, এই হাস্যময় অজ্ঞান শিশুর মতো চিন্তাশূন্য সরল মুখশ্ৰী একবার যদি দুঃখের অন্ধকারে লিন হইয়া যায়, তবে বোধ হয় বালিকা আহত লতাটির ন্যায় জন্মের মতো ত্ৰিয়মাণ ও অবসন্ন হইয়া ড়ে, বর্ষার সলিলসেকে- বসন্তের বায়ুবীজনে আর বোধ হয় সে মাথা তুলিতে পারে না। নরেন্দ্র অনুপের যে অর্থ পাইয়াছিলেন, তাহাতে পল্লিগ্রামে বেশ সুখে স্বচ্ছন্দে থাকিতে পারিতেন। অনুপের জীবদ্দশায় খেতের ধান, পুকুরের মাছ ও বাগানের শাকসবজী, ফলমূলে দৈনিক আহারব্যয়