পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

)の8 রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহাদের বুকের ভিতর কী একটি কথা লুকানো রহিয়াছে। তাহাদের আঁধার ছায়া আঁধার পুষ্করিণীর ऊ(लद्ध भक्षा निचिऊ ।' মহেন্দ্ৰ কতক্ষণ দেখিতে লাগিল, দেখিয়া দেখিয়া নিশ্বাস ফেলিয়া ভাবিল- “আমার ভাগ্যে পৃথিবী उाली कड़िशा (डों का श्ल ना ।' মহেন্দ্ৰ সেই রাত্রেই গৃহত্যাগ করিতে মনস্থ করিল, ভাবিল পৃথিবীতে যাহাকে ভালোবাসিয়াছে সকলকেই ভুলিয়া যাইবে । ভাবিল সে এ পর্যন্ত পৃথিবীর কোনো উপকার করিতে পারে নাই, কিন্তু এখন হইতে পরোপকারের জন্য তাহার স্বাধীন জীবন উৎসর্গ করিবে । কিন্তু গৃহে রজনীকে একাকিনী ফেলিয়া গেলে সে নিরপরাধিনী যে কষ্ট পাইবে, তাহার প্রায়শ্চিত্ত কিসে হইবে । এ কথা ভাবিলে অনেকক্ষণ ভাবা যাইত, কিন্তু মহেন্দ্রের ভাবিতে ইচ্ছা হইল না- ভাবিল না । মহেন্দ্ৰ তাহার নিজ দোষের যতী-কিছু অপবাদ-যন্ত্রণা সমুদয় অভাগিনী রজনীকে সহিতে দিয়া গৃহ হইতে বহির্গত হইল। বায়ু স্তম্ভিত, গ্রামপথ আঁধার করিয়া দুই ধারে বৃক্ষশ্রেণী স্তব্ধ-গাষ্ঠীর বিষন্নভাবে দাড়াইয়া আছে। সেই আঁধার পথ দিয়া ঝটিকাময়ী নিশীথিনীতে বায়ুতাড়িত ক্ষুদ্র একখানি মেঘখণ্ডের ন্যায় মহেন্দ্ৰ যে দিকে ইচ্ছা চলিতে লাগিলেন । 础 রজনী ভাবিল যে, সে কাছে আসাতেই বুঝি মহেন্দ্ৰ অন্যত্ৰ চলিয়া গেল । বাতায়নে বসিয়া জ্যোৎস্নাসুপ্ত পুষ্করিণীর জলের পানে চাহিয়া চাহিয়া কঁদিতে লাগিল । সপ্তম পরিচ্ছেদ করুণা ভাবে এ কী দায় হইল, নরেন্দ্ৰ বাড়ি ফিরিয়া আসে না কেন । অধীর হইয়া বাড়ির পুরাতন চাকরানী ভবির কাছে গিয়া জিজ্ঞাসা করিল, নরেন্দ্ৰ কেন আসিতেছেন না । সে হাসিয়া কহিল, সে তাহার কী জানে । করুণা কহিল, “না, তুই জানিস।” ভাবি কহিল, “ওমা, আমি কী করিয়া বলিব ।” করুণা কোনো কথায় কৰ্ণপাত করিল না । ভবির বলিতেই হইবে নরেন্দ্ৰ কেন আসিতেছে না । কিন্তু অনেক পীড়াপীড়িতেও ভবির কাছে বিশেষ কোনো উত্তর পাইল না । করুণা অতিশয় বিরক্ত হইয়া কঁাদিয়া ফেলিল ও প্রতিজ্ঞা করিল যে, যদি মঙ্গলবারের মধ্যে নরেন্দ্র না আসেন তবে তাহার যতগুলি পুতুল আছে সব জলে ফেলিয়া দিবে। ভবি বুঝাইয়া দিল যে, পুতুল ভাঙিয়া ফেলিলেই যে নরেন্দ্রের আসিবার বিশেষ কোনো সুবিধা হইবে তাহা নহে, কিন্তু তাহার কথা শুনে কে । না আসিলে ভাঙিয়া ফেলিবেই ফেলিবে । বাস্তবিক নরেন্দ্র অনেকদিন দেশে আসে নাই । কিন্তু পাড়ার লোকেরা বাচিয়াছে, কারণ আজকাল নরেন্দ্র যখনই দেশে আসে তখনই গোটা দুই-তিন কুকুর এবং তদপেক্ষা বিরক্তিজনক গোটা দুই-চার সঙ্গী তাহার সঙ্গে থাকে। তাহারা দুই-তিন দিনের মধ্যে পাড়াসুদ্ধ বিব্রত করিয়া তুলে। আমাদের পণ্ডিতমহাশয় এই কুকুরগুলা দেখিলে বড়োই ব্যতিব্যস্ত হইয়া পড়িতেন । যাহা হউক, পণ্ডিতমহাশয়ের বিবাহের কথাটা লইয়া পাড়ায় বড়ো হাসিতামাসা চলিতেছে। কিন্তু ভট্টাচাৰ্যমহাশয় বিশ বাইশ ছিলিম তামাকের ধুয়ায়, গোটাকতক নস্যের টিপে এবং নবগৃহিণীর অভিমানকুঞ্চিত ভুমেঘনিক্ষিপ্ত দুই-একটি বিদ্যুতালোকের আঘাতে সকল কথা তুড়ি দিয়া উড়াইয়া দেন। নিধিরাম ব্যতীত পণ্ডিতমহাশয়কে বাটী হইতে কেহ বাহির করিতে পারিত না। পণ্ডিতমহাশয় আজকাল একখানি দর্পণ ক্রয় করিয়াছেন, চশমাটি সোনা দিয়া বাধাইয়াছেন, দূরদেশ হইতে সূক্ষ্মশুভ্র উপবীত আনয়ন করিয়াছেন। তাহার পত্নী কাত্যায়নী পাড়ার মেয়েদের কাছে গল্প করিয়াছে যে, মিনসা নাকি আজকাল মৃদু হাসি হাসিয়া উদরে হাত বুলাইতে বুলাইতে রসিকতা করিতে প্ৰাণপণে চেষ্টা করেন। কিন্তু পণ্ডিতমশায়ের নামে পূর্বে কখনো এরূপ কথা উঠে নাই। আমরা পণ্ডিতমহাশয়ের