পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

邻欧ö灭 〉のQ রসিকতার যে দুই-একটা নিদর্শন পাইয়াছি তাহার মর্মােৰ্থ বুঝা আমাদের সাধ্য নহে। তাহার মধ্যে প্রকৃতি, পুরুষ, মহৎ, অহংকার; প্রমা, অবিদ্যা, রজুতে সর্পভ্রম, পর্বতো।বহ্নিমান ধূমাৎ ইত্যাদি নানাবিধ দার্শনিক হাঙ্গামা আছে। পণ্ডিতমহাশয়ের বেদান্তসূত্র ও সাংখ্যোর উপর মাকড়সায় জাল বিস্তার করিয়াছে, আজকাল জয়দেবের গীতগোবিন্দ লইয়া পণ্ডিতমহাশয় ভাবে ভরপুর হইয়া আছেন । এই তো গেল পণ্ডিতমহাশয়ের অবস্থা । ls আর আমাদের কাত্যায়নী ঠাকুরানীটি দিন কতক আসিয়াই পাড়ার মেয়েমহল একেবারে সরগরম করিয়া তুলিয়াছেন । তাহার মতো গল্পগুজব করিতে পাড়ায় আর কাহারও সামর্থ্য নাই। হাত-পা নড়িয়া চোখ-মুখ ঘুরাইয়া চতুর্দশ ভূবনের সংবাদ দিতেন। একজন তাহার নিকট কলিকাতা শহরটা কী প্রকার তাহারই সংবাদ লইতে গিয়াছিলেন । তিনি তাহাকে বুঝাইয়া দেন যে, সেখানে বড়ো বড়ো মাঠ, সায়েবরা চাষ করে, রাস্তার দু। ধার সিপাহি শান্তিরি গোরার পাহারা, ঘরে ঘরে গোরু। কাটে ইত্যাদি । আরো অনেক সংবাদ দিয়াছিলেন, সকল কথা আবার মনেও নাই । কাত্যায়নীর পতিভক্তি অতিরিক্ত ছিল এবং এই পতিভক্তি-সংক্রান্ত নিন্দার কথা তাহার কাছে যত শুনিতে পাইব এমন আর কাহারও কাছে নয়। পাড়ার সকল মেয়ের নাড়ীনক্ষত্র পর্যন্ত অবগত ছিলেন । তাহার আর-একটি স্বভাব ছিল যে, তিনি ঘণ্টায় ঘণ্টায় সকলকে মনে করাইয়া দিতেন যে, মিছামিছি পরের চর্চা তার কোনোমতে ভালো লাগে না। আর বিন্দু, হারার মা ও বোসেন্দের বাড়ির বড়োবাউ যেমন বিশ্বনিন্দুক এমন আর কেহ নয়। কিন্তু তাহাও বলি, কাত্যায়নী ঠাকুরানীকে দেখিতে মন্দ ছিল না- তবে চলিবার, বলিবার, চাহিবার ভাবগুলি কেমন এক প্রকারের | তা হউক গে, আমন এক-একজনের স্বাভাবিক হইয়া থাকে । অষ্টম পরিচ্ছেদ নরেন্দ্রের অনেকগুলি দোষ জুটিয়াছে সত্য, কিন্তু করুণাকে সে-সকল কথা কে বলে বলে দেখি । সে বেচারি কেমন বিশ্বাস্তচিত্তে স্বপ্ন দেখিতেছে, তাহার সে স্বপ্ন ভাঙাইবার প্রয়োজন কী । কিন্তু সে আত শত বুঝেও না, অত কথায় কানও দেয় না । কিন্তু রাত দিন শুনিতে শুনিতে দুই-একটা কথা মনে লাগিয়া যায় বৈকি। করুণার অমন প্ৰফুল্ল মুখ, সেও দুই একবার মলিন হইয়া যায়- নয় তো কী ! কিন্তু নরেন্দ্রকে পাইলেই সে সকল কথা ভুলিয়া যায়, জিজ্ঞাসা করিতে মনেই থাকে না, অবসরই পায় না । তাহার অন্যান্য এত কথা কহিবার আছে যে, তাহাই ফুরাইয়া উঠিতে পারে না, তো, অন্য কথা ! কিন্তু করুণার এ ভােব আর অধিক দিন থাকিবে না। তাহা বলিয়া রাখিতেছি। নরেন্দ্র যেরূপ অন্যায় আরম্ভ করিয়াছে তাহা আর বলিবার নহে। নরেন্দ্ৰ এখন আর কলিকাতায় বড়ো একটা যাতায়াত করে না | করুণাকে ভালোবাসিয়া যে যায় না, সে ভ্ৰম যেন কাহারও না হয় । কলিকাতায় সে যথেষ্ট ঋণ করিয়াছে, পাওনাদারদের ভয়ে সে কলিকাতা ছাড়িয়া পলাইয়াছে। দিনে দিনে করুণার মুখ মলিন হইয়া আসিতেছে। নরেন্দ্র যখন কলিকাতায় থাকিত, ছিল ভালো । চব্বিশ ঘণ্টা চােখের সামনে থাকিলে কাহাকেই বা না চিনা যায়? নরেন্দ্রের স্বভাব করুণার নিকট ক্রমে ক্রমে প্রকাশ পাইতে লাগিল। করুণার কিছুই তাহার ভালো লাগিতা না। সর্বদাই খিটখিটু সর্বদাই বিরক্ত । এক মুহুৰ্তও ভালো মুখে কথা কহিতে জানে না— অধীরা করুণা যখন হর্ষে উৎফুল্প হইয়া তাহার নিকট আসে, তখন সে সহসা এমন বিরক্ত হইয়া উঠে যে করুণার মন একেবারে দমিয়া যায়। নরেন্দ্র সর্বদাই এমন রুষ্ট থাকে যে করুণা তাহাকে সকল কথা বলিতে সাহস করে না, সকল সময় তাহার কাছে যাইতে ভয় করে, পাছে সে বিরক্ত হইয়া তিরস্কার করিয়া উঠে । তদ্ভিন্ন সন্ধ্যাবেলা তাহার নিকট কাহারও ঘোষিবার জো ছিল না, সে মাতাল হইয়া যাহা ইচ্ছা তাই করিত । যাহা হউক, করুণার মুখ দিনে দিনে মলিন হইয়া আসিতে লাগিল। অলীক কল্পনা বা সামান্য অভিমান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে করুণাধ চক্ষে প্ৰায় জল দেখি নাই- এইবার ঐ অভাগিনী আন্তরিক মনের কষ্টে কঁদিল । እ8 | |br