পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSV अदीक्-मा5नायी চাপকন পেন্টুলুন ছিল, কলিকাতায় সে চাপাকান-পেস্টুলুন ব্যতীত ঘর হইতে বাহির হইত না। চাপকন-পেন্টুলুন-পরা নিধি আসিয়া যখন গভীর স্বরে কহিল ‘কোন হ্যায় রে!' তখন অমনি চারি দিক স্তব্ধ হইয়া গেল। নিধি পকেট হইতে এক টুকরা কাগজ ও পেনসিল বাহির করিয়া পাহারাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করিল। তাহার নম্বর কত ও সে কোন থানায় থাকে, এবং উত্তর না পাইতে পাইতে সম্মুখস্থ ছাকরা গাড়ির কোচম্যানকে জিজ্ঞাসা করিল, “লালদিঘির এভু-সাহেবের বাড়ি জানো ?” পাহারাওয়ালা ভাবিল না জানি এভুসাহেব কে হইবে ও দাড়ি চুলকাইতে চুলকাইতে ‘বাবু বাবু করিতে লাগিল। নিধি। তৎক্ষণাৎ ফিরিয়া দাড়াইয়া সেই বাবুটিকে জিজ্ঞাসা করিল, “মহাশয়, আপনার বাড়ি কোথায় । নাম কী ।” বাবুটি গোলমালে সন্ট করিয়া সরিয়া পড়িলেন এবং সে পাহারাওয়ালাটিও অধিক উচ্চবাচ্য না ‘করিয়া ভিড়ের মধ্যে মিশিয়া পড়িল । ভিড় চুকিয়া গেল, নিধি ধরাধরি করিয়া পণ্ডিতমহাশয়কে একটি গাড়িতে লইয়া গিয়া তুলিল এবং সেই রাত্রেই দেশে যাত্রা করিল। বেচারি পণ্ডিতমহাশয় লজ্জায় দুঃখে কষ্টে বালকের ন্যায় কঁদিতে লাগিলেন । নিধি কহিল, কাত্যায়নীর নামে গহনা ও টাকা-চুরির নালিশ করা যাক। পণ্ডিতমহাশয় কোনোমতে সম্মত হইলেন না । দেশে ফিরিয়া আসিয়া পণ্ডিতমহাশয় করুণার সমুদয় বৃত্তান্ত শুনিলেন। তিনি কহিলেন, “এ গ্রামে থাকিয়া আর কী করিব। শূন্য গৃহ ত্যাগ করে কাশী চলিলাম। বিশ্বেশ্বরের চরণে এ প্রাণ বিসর্জন করিব।” এই বলিয়া পণ্ডিতমহাশয় ঘর দুয়ার সমস্ত বিক্রয় করিয়া কাশী চলিলেন। পাড়ার সমস্ত বালকেরা তাহাকে ঘিরিয়া দাড়াইল, অশ্রুপূর্ণনয়নে তিনি সকলকে আদর করিলেন। এমন একটি বালক ছিল না। যে তাহার মুখের পানে চাহিয়া কাদিয়া ফেলে নাই । এইরূপে কঁদিতে কঁাদিতে পণ্ডিতমহাশয় গ্রাম ত্যাগ করিয়া চলিয়া গেলেন । অনেক লোক দেখিয়াছি কিন্তু তেমন ভালোমানুষ আর দেখিলাম না। নরেন্দ্রের বাড়িঘর সমস্ত নিলামে বিক্ৰীত হইয়া গিয়াছে। নরেন্দ্র গ্রাম ত্যাগ করিয়া কলিকাতায় চলিয়া গিয়াছে। কোথায় আছে কে জানে । অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ মহেন্দ্ৰ চলিয়া গেলে রজনী মনে করিল, “আমিই বুঝি মহেন্দ্রের চলিয়া যাইবার কারণ ! মহেন্দ্রের মাতা মনে করিলেন যে, রজনী বুঝি মহেন্দ্রের উপর কোনো কৰ্কশ ব্যবহার করিয়াছে ; আসিয়া কহিলেন, “পোড়ারমুখী ভালো এক ডাকিনীকে ঘরে আনিয়াছিলাম !” রজনীর শ্বশুর আসিয়া কহিলেন, “রাক্ষসী, তুই এ সংসার ছারখার করিয়া দিলি!” রজনীর ননদ আসিয়া কহিলেন, “হতভাগিনীর সহিত দাদার কী কুক্ষণেই বিবাহ হইয়াছিল!” রজনী একটি কথাও বলিল না। রজনীর নিজেরই যে আপনার প্রতি দারুণ ঘূণা জন্মিয়াছিল, সেই "ঘুণার যন্ত্রণায় সে মনে করিল- বুঝি ইহার একটি কথাও অন্যায় নহে। সে মনে করিল, যে তিরস্কার তাহাকে করা হইতেছে সে তিরস্কার বুঝি তাহার যথার্থই পাওয়া উচিত। রজনী কাহাকেও কিছু বলিল না, একবার কান্দিলও না । এ কয়দিন তাহার মুখশ্ৰী অতিশয় গভীর- অতিশয় শান্ত- যেন মনে-মনে কী একটি সংকল্প করিয়াছে, মনে-মনে কী একটি প্ৰতিজ্ঞা বাধিয়াছে। এই দুই মাস হইল মহেন্দ্ৰ বিদেশে গিয়াছে- এই দুই মাস ধরিয়া রজনী যেন কী একটা