পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> ○総 কে কেমন বােঝে অর্থ তাহার, কেহ এক বলে, কেহ বলে। আর, আমারে শুধায় বৃথা বারবার- ; দেখে তুমি হাস বুঝি । কে গো তুমি, কোথা রয়েছ গোপনে আমি মরিতেছি খুজি । শুধু কি কবিতা-লেখার একজন কর্তা কবিকে অতিক্ৰম করিয়া তাহার লেখনী চালনা করিয়াছেন ? তাহা নহে। সেইসঙ্গে ইহাও দেখিয়াছি যে, জীবনটা যে গঠিত হইয়া উঠিতেছে, তাহার সমস্ত সুখদুঃখ, তাহার সমস্ত যোগবিয়োগের বিচ্ছিন্নতাকে কে একজন একটি অখণ্ড তাৎপর্যের মধ্যে গাথিয়া তুলিতেছেন। সকল সময়ে আমি তাহার আনুকূল্য করিতেছি কি না জানি না, কিন্তু আমার সমস্ত বাধা-বিপত্তিকেও, আমার সমস্ত ভাঙাচোরাকেও তিনি নিয়তই গাথিয়া জুড়িয়া দাড় করাইতেছেন । কেবল তাই নয়, আমার স্বাৰ্থ, আমার প্রবৃত্তি, আমার জীবনকে যে অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ করিতেছে তিনি বারে বারে সে সীমা ছিন্ন করিয়া দিতেছেন— তিনি সুগভীর বেদনার দ্বারা, বিচ্ছেদের দ্বারা, বিপুলের সহিত, বিরাটের সহিত তাহাকে যুক্ত করিয়া দিতেছেন । সে যখন একদিন হাট করিতে বাহির হইয়াছিল তখন বিশ্বমানবের মধ্যে সে আপনার সফলতা চায় নাই- সে আপনার ঘরের সুখ ঘরের সম্পদের জন্যই কড়ি সংগ্ৰহ করিয়াছিল। কিন্তু সেই মেঠো পথ, সেই ঘোরো সুখদুঃখের দিক হইতে কে তাহাকে জোর করিয়া পাহাড়-পর্বত অধিত্যক-উপত্যকার দুৰ্গমতার মধ্য দিয়া টানিয়া লইয়া যাইতেছে । চাষিগণ ফিরে দিবা-অবসানে, গোঠে ধায় গোরু, বধূ জল আনে শতবার যাতায়াতে--- একদা প্ৰথম প্ৰভাতবেলায় সে পথে বাহির হইনু হেলায়, মনে ছিল দিন কাজে ও খেলায় কাটায়ে ফিরিব রাতে । পদে পদে তুমি ভুলাইলে দিক, কোথা যাব আজি নাহি পাই ঠিক, ক্লাস্তহৃদয় ভ্ৰান্ত পথিক এসেছি নূতন দেশে । কীভূ বেদনার তমোগহবরে চিনি না যে পথ সে পথের ‘পরে ።' চলেছি পাগলবেশে । এই যে কবি, যিনি আমার সমস্ত ভালোমন্দ, আমার সমস্ত অনুকূল ও প্রতিকূল উপকরণ লইয়া তিনি যে কেবল আমার এই ইহজীবনের সমস্ত খণ্ডতকে ঐক্যদান করিয়া বিশ্বের সহিত তাহার