পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S88 রবীন্দ্র-রচনাবলী এই জীবনযাত্রার অবকাশকালে মাঝে মাঝে শুভমুহুর্তে বিশ্বের দিকে যখন অনিমেষদৃষ্টি মেলিয়া ভালো করিয়া চাহিয়া দেখিয়ছি তখন আর এক অনুভূতি আমাকে আচ্ছন্ন করিয়াছে। নিজের সঙ্গে । বিশ্বপ্রকৃতির এক অবিচ্ছিন্ন যোগ, এক চিরপুরাতন একাত্মকতা আমাকে একান্তভাবে আকর্ষণ করিয়াছে। কতদিন নীেকায় বসিয়া সূৰ্যকারোদ্দীপ্ত জলে স্থলে আকাশে আমার অন্তরাত্মাকে নিঃশেষে বিকীর্ণ করিয়া দিয়াছি ; তখন মাটিকে আর মাটি বলিয়া দূরে রাখি নাই, তখন জলের ধারা আমার অন্তরের মধ্যে আনন্দগানে বহিয়া গেছে । তখনি এ কথা বলিতে পারিয়াছি হই যদি মাটি, হই যদি জল, হইযদি তৃণ, হাইফুলফল, জীবসাথে যদি ফিরি। ধরাতল কিছুতেই নাই ভাবনা, যেথা যাব। সেথা অসীম বাধনে অন্তবিহীন আপনা। তখনি এ কথা বলিয়াছি আমারে ফিরায়ে লাহাে, অয়ি বসুন্ধরে, কোলের সন্তানে তব কোলের ভিতরে বিপুল অঞ্চলতলে। ওগো মা মৃন্ময়ি, তোমার মৃত্তিকা-মাঝে ব্যাপ্ত হয়ে রই, দিগবিদিকে আপনাকে দিই বিস্তারিয়া दम6छट्र एल्यान्म6न्मद बा6ऊ । এ কথা বলিতে কুষ্ঠিত হই নাই আমারে মিশায়ে লয়ে অনন্ত গগনে অশ্রান্তচরণে করিয়াছ প্ৰদক্ষিণ সবিতৃমণ্ডল, অসংখ্য রজনীদিন যুগযুগান্তর ধরি ; আমার মাঝারে উঠিয়াছে তৃণ তব, পুষ্প ভারে ভারে ফুটিয়াছে, বর্ষণ করেছে তরুরাজি পত্র ফুল ফল গন্ধরেণু। আমার স্বাতন্ত্র্যগর্ব নাই- বিশ্বের সহিত আমি আমার কোনো বিচ্ছেদ স্বীকার করি না । মানব-আত্মার দম্ভ আর নাহি মোর চেয়ে তোর স্নিগ্ধশ্যাম মাতৃমুখ-পানে ; ভালোবাসিয়াছি আমি ধূলিমাটি তের। আশা করি, পাঠকেরা ইহা হইতে এ কথা বুঝিবেন, আমি আত্মাকে বিশ্বপ্রকৃতিকে বিশ্বেশ্বরকে স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র কোঠায় খণ্ড খণ্ড করিয়া রাখিয়া আমার ভক্তিকে বিভক্ত করি নাই। আমি, কি আত্মার মধ্যে কি বিশ্বের মধ্যে, বিস্ময়ের অন্ত দেখি না। আমি জড় নাম দিয়া, সসীম নাম দিয়া, কোনো জিনিসকে এক পাশে ঠেলিয়া রাখিতে পারি নাই। এই সীমার মধ্যেই, এই প্রত্যক্ষের মধ্যেই, অনন্তের যে প্রকাশ তাঁহাই আমার কাছে অসীম বিস্ময়াবহ। আমি এই জলস্থল তরুলতা পশুপক্ষী চন্দ্ৰসূৰ্য দিনরাত্রির মাঝখান দিয়া চোখ মেলিয়া চলিয়াছি, ইহা আশ্চর্য। এই জগৎ তাহার অণুতে পরমাণুতে, তাহার প্রত্যেক ধূলিকণায় আশ্চর্য। আমাদের পিতামহগণ যে অগ্নিবায়ু সূৰ্যচন্দ্র