পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মপরিচয় S8ዓ . পারি। যে জাহাজে অনন্তকোটি লোক যাত্ৰা করিয়া বাহির হইয়াছে তাহা হইতে লাফ দিয়া পড়িয়া সঁতারের জোরে সমুদ্র পার হইবার চেষ্টা সফল হইবার নহে। হে বিশ্ব, হে মহাতরী, চলেছ কোথায় ? আমারে তুলিয়া লও তোমার আশ্রয়ে । একা আমি সাতারিয়া পারিব না যেতে | কোটি কোটি যাত্রী ওই যেতেছে চলিয়াআমিও চলিতে চাই উহাদেরি সাথে । যে পথে তপন শশী আলো ধরে আছে সে পথ করিয়া তুচ্ছ, সে আলো ত্যজিয়া আপনারি ক্ষুদ্র এই খদ্যোত-আলোকে কেন অন্ধকারে মারি পথ খুঁজে খুঁজে । পাখি যাবে উড়ে যায় আকাশের পানে মনে করে এনুবুঝি পৃথিবী ত্যাজিয়া ; शऊ 90g, गऊ 90g, शऊ 98 याश, কিছুতে পৃথিবী তবু পারে না ছাড়িতেঅবশেষে শ্ৰান্তদেহে নীড়ে ফিরে আসে । পরিণত বয়সে যখন ‘মালিনী’ নাট্য লিখিয়াছিলাম, তখনাে এইরূপ দূর হইতে নিকটে, অনির্দিষ্ট হইতে নির্দিষ্ট, কল্পনা হইতে প্রত্যক্ষের মধ্যেই ধর্মকে উপলব্ধি করিবার কথা বলিয়াছি বুঝিলাম ধর্ম দেয় স্নেহ মাতারূপে, পুত্ররূপে মোহ লয় পুন ; দাতারূপে করে দান, দীনারাপে করে তা গ্ৰহণ ; শিষ্যরূপে করে ভক্তি, গুরুরূপে করে আশীৰ্ব্বাদ ; প্ৰিয়া হয়ে পাষাণ অন্তরে প্রেম-উৎস লয় টানি, অনুরক্ত হয়ে করে সর্বত্যাগ । ধর্ম বিশ্বলোকালয়ে ফেলিয়াছে চিত্তজাল, নিখিল ভুবন টানিতেছে প্ৰেমক্রোড়ে- সে মহাবিন্ধন ভরেছে। অন্তর মোর আনন্দবেদনে । নিজের সম্বন্ধে আমার যেটুকু বক্তব্য ছিল, তাহা শেষ হইয়া আসিল, এইবার শেষ কথাটা বলিয়া উপসংহার করিব মর্তবাসীদের তুমি যা দিয়েছ, প্ৰভু, মর্তের সকল আশা মিটাইয়া। তবু রিক্ত তাহা নাহি হয় । তার সর্বশেষ আপনি খুঁজিয়া ফিরে তোমারি উদ্দেশ । অন্তহীন ধারা তার চরণে তোমারি নিত্য জলাঞ্জলিরাপে ঝরে অনিবার কুসুম আপন গন্ধে সমস্ত সংসার সম্পূর্ণ করিয়া। তবু সম্পূর্ণ না হয়তোমারি পূজায় তার শেষ পরিচয় ।