পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>(?や ट्रोल-शिष्नांत्री ধর্মবোধের যে আভাস মেলে সে হচ্ছে বৃহতের আস্বাদনে । এইখানে শিশু কেবল তাকেই দেখে যিনি কেবল শান্তম, তারই মধ্যে বেড়ে ওঠে। যিনি কেবল সত্যম। বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে নিজের প্রকৃতির মিলটা অনুভব করা সহজ, কেননা সে দিক থেকে কোনো চিত্ত আমাদের চিত্তকে কোথাও বাধা দেয় না। কিন্তু এই মিলিটাতেই আমাদের তৃপ্তির সম্পূর্ণতা কখনােই ঘটতে পারে না । কেননা আমাদের চিত্ত আছে, সেও আপনার একটি বড়ো মিল চায় । এই মিলিটা বিশ্বপ্রকৃতির ক্ষেত্রে সম্ভব নয়, বিশ্বমানবের ক্ষেত্রেই সম্ভব। সেইখানে আপনাকে ব্যাপ্ত করে আপনার বড়ো-আমির সঙ্গে আমরা মিলতে চাই। সেইখানে আমরা আমাদের বড়ো পিতাকে, সখাকে, স্বামীকে, কর্মের নেতাকে, পথের চালককে চাই । সেইখানে কেবল আমার ছোটাে-আমিকে নিয়েই যখন চলি তখন মনুষ্যত্ব পীড়িত হয় ; তখন মৃত্যু ভয় দেখায়, ক্ষতি বিমর্ষ করে, তখন বর্তমান ভবিষ্যৎকে হনন করতে থাকে, দুঃখশোক এমন একান্ত হয়ে ওঠে যে তাকে অতিক্রম করে কোথাও সাস্তুনা দেখতে পাই নে | তখন প্ৰাণপণে কেবলই সঞ্চয় করি, ত্যাগ করবার কোনো অর্থ দেখি নে, ছোটো ছোটো ঈর্ষাদ্বেষে মন জর্জরিত হয়ে ওঠে- তখন শুধু দিনযাপনের শুধু প্ৰাণধারণের গ্লানি নিশি নিশি রুদ্ধ ঘরে ক্ষুদ্রশিখা স্তিমিত দীপের, ধূমাঙ্কিত কালি । এই বড়ো-আমিকে চাওয়ার আবেগ ক্ৰমে আমার কবিতার মধ্যে যখন ফুটতে লাগল, অর্থাৎ অন্ধুরীরূপে বীজ যখন মাটি ফুড়ে বাইরের আকাশে দেখা দিলে, তারই উপক্রম দেখি, “সোনার তরীর ‘বিশ্বনৃত্যে বিপুল গভীর মধুর মন্দ্ৰে কে বাজাবে সেই বাজনা । উঠিবে চিত্ত করিয়া নৃত্য বিস্মৃত হবে আপনা। টুটিবে বন্ধ, মহা আনন্দ, নব সংগীতে নূতন ছন্দ, হৃদয়সাগরে পূর্ণচন্দ্র জাগাবে নবীন বাসনা । কিন্তু এতেও বাজনার সুর। যদিও এ সূর মন্দ্র বটে, কিন্তু মধুর মন্দ্র। যাই হােক কবিতার গতিটা এখানে প্রকৃতির ধাপ থেকে মানুষের ধাপে উঠছে। বিরাটের চিন্ময়তার পরিচয় লাভ করছে। তাই ঐ কবিতাতেই আছে ওই কে বাজায় দিবসনিশায় কালের যন্ত্রে বিচিত্র সুর কেহ শোনে, কেহ না শোনে । অর্থ কী তার ভাবিয়া না পাই, কত গুণী জ্ঞানী চিন্তিছে তাই, মহান মানবমানস সদাই উঠে পড়ে তারি শাসনে । বিশ্বমানবের ইতিহাসকে যে একজন চিন্ময় পুরুষ সমস্ত বাধাবিঘ্ন ভেদ করে দুৰ্গম বন্ধুর পথ দিয়ে চালনা করছেন। এখানে তারই কথা দেখি । এখন হতে নিরবচ্ছিন্ন শান্তির পালা শেষ হল। কিন্তু বিরোধ-বিপ্লবের ভিতর দিয়ে মানুষ যে ঐক্যটি খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই ঐক্যটি কী। সেই হচ্ছে ।