পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S VO এমনি করে ক্রমে ক্রমে জীবনের মধ্যে ধর্মকে স্পষ্ট করে স্বীকার করবার অবস্থা এসে পৌঁছল। যতই এটা এগিয়ে চলল ততই পূর্ব জীবনের সঙ্গে আসন্ন জীবনের একটা বিচ্ছেদ দেখা দিতে লাগল। অনন্ত আকাশে বিশ্ব-প্রকৃতির যে শান্তিময় মাধুৰ্য-আসনটা পাতা ছিল, সেটাকে হঠাৎ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে বিরোধ-বিক্ষুব্ধ মানবলোকে রুদ্রবেশে কে দেখা দিল। এখন থেকে দ্বন্দ্বের দুঃখ, বিপ্লবের আলোড়ন । সেই নৃতম বোধের অভু্যদয় যে কী রকম ঝড়ের বেশে দেখা দিয়েছিল এই সময়কার “বৰ্ষশেষ কবিতার রবীন্দ্র-রচনাবলী মধ্যে সেই কথাটি আছে রাত্রির প্রান্তে প্ৰভাতের যখন প্ৰথম সঞ্চার হয় তখন তার আভাসটা যেন কেবল অলংকার রচনা করতে থাকে । আকাশের কোণে কোণে মেঘের গায়ে গায়ে নানা-রকম রঙ ফুটতে থাকে, গাছের মাথার উপরটা ঝিকমিক করে, ঘাসে শিশিরগুলো ঝিলমিল করতে শুরু করে, সমস্ত ব্যাপারটা প্রধানত আলংকারিক । কিন্তু তাতে করে এটুকু বোঝা যায় যে রাতের পালা শেষ হয়ে দিনের পালা আরম্ভ হল। বােঝা যায় আকাশের অন্তরে অন্তরে সূর্যের স্পর্শ লেগেছে ; বােঝা যায় সুপ্তরাত্রির নিভৃত গভীর পরিব্যাপ্ত শান্তি শেষ হল, জাগরণের সমস্ত বেদনা সপ্তকে সপ্তকে মিড় টেনে এখনই অশান্ত সুরের ঝংকারে বেজে উঠবে। এমনি করে ধর্মবােধের প্রথম উন্মেষটা সাহিত্যের অলংকারেই প্রকাশ হে দুৰ্দম, হে নিশ্চিত, হে নূতন, নিষ্ঠুর নূতন সহজ প্রবল । জীর্ণ পুষ্পদল যথা ধ্বংস ভ্রংশ করি চতুর্দিকে বাহিরায় ফলপুরাতন পৰ্ণপুট দীর্ণ করি বিকীর্ণ করিয়া অপূর্ব আকারে তেমনি সবলে তুমি পরিপূর্ণ হয়েছ প্রকাশ প্ৰণমি তোমারে । তোমারে প্রণমি আমি, হে ভীষণ, সুস্নিগ্ধ শ্যামল, অক্লান্ত অস্নান’ । সদ্যোজাত মহাবীর, কী এনেছ করিয়া বহন কিছু নাহি জানো । জুলাদচিরেখাকরজোড়ে চেয়ে আছি উৰ্ধমুখে, পড়িতে জানি না কী তাহাতে লেখা । হে কুমার, হাস্যমুখে তোমার ধনুকে দাও টান ଐମଲ ଅମଳ, বক্ষের পঞ্জর ভেদি অন্তরেতে হউক। কম্পিত সুতীব্র স্বনন । । হে কিশোর, তুলে লও তােমার উদার জয়ভেরী করহে আহবান । অপিব পরান । চাব না পশ্চাতে মোরা, মানিব না বন্ধন ক্ৰন্দন, হেরিব না দিক, গনিব না দিনক্ষণ, করিব না বিতর্ক বিচার, উদাম পথিক ।