পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ა \ტ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী করো। চরম সত্য এবং পরম সত্য হচ্ছে ঐ প্রসন্ন মুখ । সেই সত্যই হচ্ছে সকল রুদ্রতার উপরে। কিন্তু এই সত্যে পৌঁছতে গেলে রুদ্রের স্পর্শ নিয়ে যেতে হবে । রুদ্রকে বাদ দিয়ে যে প্ৰসন্নতা, অশান্তিকে অস্বীকার করে যে শান্তি, সে তো স্বপ্ন, সে সত্য নয় । বজে তোমার বাজে বাশি, সে কি সহজ গান । সেই সুরেতে জগিব আমি দাও মোরে সেই কানি । ভুলব না। আর সহজেতে, সেই প্ৰাণে মন উঠবে মেতে মৃত্যুমাঝে ঢাকা আছে যে অন্তহীন প্ৰাণ । সে ঝড় যেন সই আনন্দে চিত্তবীণার তারে সপ্ত সিন্ধু দশ দিগন্ত क्राbा९3 6रा 'द९दF6 | ‘আরাম হতে ছিন্ন করে সেই গভীরে লও গো মোরে অশান্তির অস্তরে যেথায় শান্তি সুমহান । “শারদোৎসব থেকে আরম্ভ করে “ফাল্লুনী' পর্যন্ত যতগুলি নাটক লিখেছি, যখন বিশেষ করে মন দিয়ে দেখি তখন দেখতে পাই, প্রত্যেকের ভিতরকার ধুয়ােটা ঐ একই। রাজা বেরিয়েছেন। সকলের সঙ্গে মিলে শারদোৎসব করবার জন্যে । তিনি খুঁজছেন তার সাথি । পথে দেখলেন ছেলেরা শরৎপ্রকৃতির আনন্দে যোগ দেবার জন্যে উৎসব করতে বেরিয়েছে। কিন্তু একটি ছেলে ছিল— উপনন্দ-সমস্ত খেলাধুলো ছেড়ে সে তার প্রভুর ঋণ শোধ করবার জন্যে নিভৃতে বসে একমনে কাজ করছিল। রাজা বললেন, তার সত্যকার সাথি মিলেছে, কেননা ঐ ছেলেটির সঙ্গে শরৎপ্রকৃতির সত্যকার আনন্দের যোগ— ঐ ছেলেটি দুঃখের সাধনা দিয়ে আনন্দের ঋণ শোধ করছে— সেই দুঃখেরই রূপ মধুরতম। বিশ্ব যে এই দুঃখতপস্যায় রত ; অসীমের যে দান সে নিজের মধ্যে পেয়েছে অশ্রান্ত প্ৰয়াসের বেদনা দিয়ে সেই দানের সে শোধ করছে। প্রত্যেক ঘাসটি নিরলস চেষ্টার দ্বারা আপনাকে প্ৰকাশ করছে, এই প্ৰকাশ করতে গিয়েই সে আপন অন্তনিহিত সত্যের ঋণ শোধ করছে। এই যে নিরন্তর বেদনায় তার আত্মোৎসর্জন, এই দুঃখই তো তার শ্ৰী, এই তো তার উৎসব, এতেই তো সে শরৎপ্রকৃতিকে সুন্দর করেছে, আনন্দময় করছে। বাইরে থেকে দেখলে একে খেলা মনে হয়, কিন্তু এ তো খেলা নয়, এর মধ্যে লেশমাত্র বিরাম নেই। যেখানে আপনি সত্যের ঋণশোধে শৈথিল্য, সেখানেই প্রকাশে বাধা, সেইখানেই কদৰ্যতা, সেইখানেই নিরানন্দ । আত্মার প্রকাশ আনন্দময় | এইজন্যেই সে দুঃখকে মৃত্যুকে স্বীকার করতে পারে- ভয়ে কিংবা আলস্যে কিংবা সংশয়ে এই দুঃখের পথকে যে লোক এড়িয়ে চলে জগতে সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়। শারদোৎসবের ভিতরকার কথাটাই এই— ও তো গাছতলায় বসে বসে বাঁশির সুর শোনবার কথা নয়। ‘রাজা’ নাটকে সুদর্শনা আপন অরূপ রাজাকে দেখতে চাইলে ; রূপের মোহে মুগ্ধ হয়ে ভুল রাজার গলায় দিলে মালা ; তার পরে সেই ভুলের মধ্যে দিয়ে, পাপের মধ্যে দিয়ে, যে অগ্নিদাহ ঘটালে, যে বিষম যুদ্ধ বাধিয়ে দিলে, অন্তরে বাহিরে যে ঘোর অশান্তি জাগিয়ে তুললে, তাতেই তো তাকে সত্য মিলনে পৌঁছিয়ে দিলে। প্রলয়ের মধ্যে দিয়ে সৃষ্টির পথ। তাই উপনিষদে আছে, তিনি তাপের দ্বারা তপ্ত হয়ে এই সমস্ত-কিছু সৃষ্টি করলেন। আমাদের আত্মা যা সৃষ্টি করছে তাতে পদে পদে ব্যথা। কিন্তু