পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহাত্মা গান্ধী Sob অন্তরে ও আচরণে রিপু ও পাপের সংগ্রাম আছে, তা সত্ত্বেও পুণ্যের তপস্যার দীক্ষা নিতে হবে সত্যব্রত মহাত্মার নিকটে । আজকের দিন স্মরণীয় দিন, কারণ সমস্ত ভারতে রাষ্ট্ৰীয় মুক্তির দীক্ষা ও সত্যে দীক্ষা এক হয়ে গেছে। সর্বসাধারণের কাছে ৷ ” শান্তিনিকেতন অগ্রহায়ণ ১৩৪৪ S७ जानि ४७8० १ीशैीख्रि আজ মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিবসে আশ্রমবাসী আমরা সকলে আনন্দোৎসব করব। আমি আরম্ভের সুরটুকু ধরিয়ে দিতে চাই। " আধুনিককালে এইরকমের উৎসব অনেকখানি বাহ্য অভ্যাসের মধ্যে দাড়িয়েছে। খানিকটা ছুটি ও অনেকখানি উত্তেজনা দিয়ে এটা তৈরি । এইরকম চাঞ্চল্যে এই সকল উপলক্ষের গভীর তাৎপর্য অন্তরের মধ্যে গ্ৰহণ করবার সুযোগ বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। ক্ষণজন্ম লোক যারা তারা শুধু বর্তমান কালের নন। বর্তমানের ভূমিকার মধ্যে ধরাতে গেলে তাদের অনেকখানি ছােটাে করে আনতে হয়, এমনি করে বৃহৎকালের পরিপ্রেক্ষিতে যে শাশ্বত মূর্তি প্রকাশ পায় তাকে খর্ব করি । আমাদের আশু প্রয়োজনের আদর্শে তাদের মহত্ত্বকে নিঃশেষিত করে বিচার করি। মহাকালের পটে যে ছবি ধরা পড়ে, বিধাতা তার থেকে প্রাত্যহিক জীবনের আত্মবিরোধ ও আত্মখণ্ডনের অনিবাৰ্য কুটিল ও বিচ্ছিন্ন রেখাগুলি মুছে দেন, যা আকস্মিক ও ক্ষণকালীন তাকে বিলীন করেন ; আমাদের প্রণম্য র্যারা তাদের একটি সংহত সম্পূর্ণ মূর্তি সংসারে চিরন্তন হয়ে থাকে। র্যারা আমাদের কালে জীবিত তঁদেরকেও এই ভাবে দেখবার প্রয়াসেই উৎসবের সার্থকতা । আজকের দিনে ভারতবর্ষে যে রাষ্টিক বিরোধ পরশুদিন হয়তো তা থাকবে না, সাময়িক । অভিপ্রায়গুলি সময়ের স্রোতে কোথায় লুপ্ত হবে। ধরা যাক, আমাদের রাষ্ট্রক সাধনা সফল হয়েছে, বাহিরের দিক থেকে চাইবার আর কিছুই নেই ; ভারতবর্ষ মুক্তিলাভ করল— তৎসত্ত্বেও আজকের দিনের ইতিহাসের কোন আত্মপ্রকাশটি ধূলির আকর্ষণ বঁচিয়ে উপরে মাথা তুলে থাকবে সেইটিই বিশেষ করে দেখবার যোগ্য । সেই দিক থেকে যখন দেখতে যাই তখন বুঝি, আজকের উৎসবে র্যাকে নিয়ে আমরা আনন্দ করছি তার স্থান কোথায়, তার বিশিষ্টতা কোনখানে। কেবলমাত্র রাষ্ট্রনৈতিক প্রয়োজন সিদ্ধির মূল্য আরোপ করে তাকে আমরা দেখব না, যে দৃঢ়,শক্তির বলে তিনি আজ সমগ্র ভারতবর্ষকে প্রবল ভাবে সচেতন করেছেন সেই শক্তির মহিমাকে আমরা উপলব্ধি করব । প্ৰচণ্ড এই শক্তি সমস্ত দেশের বুকজোড়া জড়ত্বের জগদ্দল পাথরকে আজ নাড়িয়ে দিয়েছে ; কয়েক বৎসরের মধ্যে ভারতবর্ষের যেন রূপান্তর জন্মান্তর ঘটে গেল। ইনি আসবার পূর্বে, দেশ ভয়ে আচ্ছন্ন, সংকোচে অভিভূত ছিল ; কেবল ছিল অন্যের অনুগ্রহের জন্য আবদার-আবেদন, মজ্জায় মজ্জায় আপনার পরে, আস্থাহীনতার দৈন্য। ভারতবর্ষের বাহির থেকে যারা আগন্তুকমাত্র তাদেরই প্রভাব হবে বলশালী, দেশের ইতিহাস বেয়ে যুগপ্রবাহিত ভারতের প্রাণধারা চিত্তধারা সেইটেই হবে স্নান, যেন সেইটেই আকস্ত্রিক- এর চেয়ে দুৰ্গতির কথা আর কী হতে পারে। সেবার দ্বারা, জ্ঞানের দ্বারা, মৈত্রীর দ্বারা, দেশকে ঘনিষ্ঠভাবে উপলব্ধি করবার বাধা ঘটাতে যথার্থই আমরা পরবাসী হয়ে পড়েছি। শাসনকর্তাদের শিক্ষাপ্রণালী রাষ্ট্রব্যবস্থা, ওদের তলোয়ার বন্দুক নিয়ে, ভারতে ওরাই হল মুখ্য ; আর আমরাই হলুম গীেণমোহাভিভূত মনে এই কথাটির স্বীকৃতি অল্প কাল পূর্ব পর্যন্ত আমাদের সকলকে তামসিকতায় জড়বুদ্ধি