পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বভারতী Rම්ම් আমাদের এ কথা মনে রাখতে হবে, পুণ্যধর্ম মাটিতে বা হাওয়ায় নেই। চিন্তার দ্বারা, সাধনার দ্বারা পুণ্যকে সমর্থন করতে হবে। আমাদের আশ্রমে সে বাধা অনেক দূর হয়েছে। আপনা-আপনি বিদেশের অতিথিরা এখানে এসে তাদের আসন পাতছেন। তঁরা বলছেন যে, তারা এখানে এসে তৃপ্তি পেয়েছেন। এমনি করেই ভারতের গঙ্গা আমাদের আশ্রমের মধ্যে রইল। দেশবিদেশের অতিথিদের চলাচল হতে লাগল। তারা আমাদের জীবনে জীবন মেলাচ্ছেন। এই আশ্রমকে অৰলম্বন করে তাদের চিত্ত প্রসারিত হচ্ছে। এর চেয়ে আর সফলতা কিছু নেই। তীর্থে মানুষ উত্তীর্ণ হয় বলেই তার নাম তীৰ্থ । এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে এসে সকলে উত্তীর্ণ হয় না ; সমস্ত পথিক যেখানে আসে চলে যাবার জন্যে, থাকবার জন্যে নয় । যেমন কলকাতার বড়োবাজার- সেখানে এসে প্রীতি মেলে না, বিরাম মেলে না, সেখানে এসে যাত্রা শেষ হয় না ; সেখানে লাভলোকসানের কথা ছাড়া আর কথা নেই। আমি কলকাতায় জন্মেছি- সেখানে আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছি না । সেখানে আমার বাড়ি আছে, তবু সেখানে কিছু নিজের আছে বলে মনে করতে পারছি না । মানুষ যদি নিজের সেই আশ্রয়টি খুঁজে না পেলে তো মনুমেন্ট দেখে, বড়ো বড়ো বাড়িঘর দেখে তার কী হবে । ওখানে কার আহবান আছে। বণিকরাই কেবল সেখানে থাকতে পারে । ও তীর্থক্ষেত্র নয়। এ ছাড়া আমাদের যেগুলো তীর্থক্ষেত্র আছে সেখানে কী হয় । সেখানে যারা পুণ্যপিপাসু তারা পাণ্ডাদের পায়ে টাকা দিয়ে আসে । সেখানে তো সব দেশের মানুষ মেলবার জন্যে ভিতরকার আহবান পায় না । কাল একটি পত্ৰ পেলাম । আমাদের সুরুলের পল্লীবিভাগের যিনি অধ্যক্ষ তিনি জাহাজ থেকে আমাকে চিঠি লিখেছেন । তিনি লিখেছেন যে, জাহাজের লোকেরা তাসখেলা ও অন্যান্য এত ছোটোখাটো আমোদপ্রমোদ নিয়ে দিন কাটায় যে তিনি বিস্মিত হয়ে আমাকে লিখেছেন যে, কেমন করে তারা এর মধ্যে থাকে। যে জীবনে কোনো বড়ো প্রকাশ নেই, ক্ষুদ্র কথায় যে জীবন ভরে উঠেছে, বিশ্বের দিকে যে জীবনের কোনো প্রবাহ নেই, তারা কেমন করে তার মধ্যে থাকে, কী করে তারা মনে তৃপ্তি পায় । শ্ৰীযুক্ত এলমহারসর্ট এই-যে বেদন অনুভব করেছেন তার কারণ কী। কারণ এই যে, তিনি আশ্রমে যে কার্যের ভার নিয়েছেন তাতে করে তাকে বৃহতের ক্ষেত্রে এসে দাড়াতে হয়েছে। তিনি তার কর্মকে অবলম্বন করে সমস্ত গ্রামবাসীদের কল্যাণক্ষেত্রে এসে দাঁড়িয়েছেন । এ কাজ তার আপনার স্বার্থের জন্যে নয়। তিনি সমস্ত গ্রামবাসীদের মানুষ বলে শ্রদ্ধা করে সকলের সঙ্গে মেলবার সুযোগ পেয়েছিলেন বলে এ জায়গা তার কাছে তীর্থ হয়ে উঠেছে । এই-যে আশেপাশের গরিব অজ্ঞ, এদের মধ্যে যাবার তিনি পথ পেয়েছিলেন। সেইজন্যে তার সঙ্গে যে-সমস্ত বড়ো বড়ো ধনী ছিলেনতাদের কেউ-বা জজ, কেউ-বা ম্যাজিষ্ট্রেট। তাদের তিনি মনে মনে অত্যন্ত অকৃতাৰ্থ বলে বুঝতে পেরেছিলেন। তারা এখানে প্রভূত ক্ষমতা পেলেও, সমস্ত দেশবাসীর সহিত অব্যাহত মিলনের পথটি খুঁজে পান নি। তারা ভারতে কোনো তীর্থে এসে পৌঁছলেন না। তাদের কেউ-বা রাজতত্তায় এসে ঠেকােলন, কেউ বা লোহার সিন্ধুকে এসে ঠেকলেন, তঁরা পুণ্যতীর্থে এসে ঠেকলেন না। আমাদের সাহেব সুরুলে এসে এর তীর্থের রূপটি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন । আমরা এখানে থেকেও যদি সেটি উপলব্ধি করতে না পারি। তবে আমাদের মতো অকৃতাৰ্থ আর কেউ নেই। তাই বলছি, আমাদের এখানে কর্মের মধ্যে, এর জ্ঞানের সাধনার মধ্যে যেন কল্যাণকে উপলব্ধি করতে পারি। এ জায়গা শুধু পাঠশালা নয়, এই জায়গা তীর্থ। দেশবিদেশ থেকে লোকেরা এখানে এসে যেন বলতে পারে- আ বীচলাম, আমরা ক্ষুদ্র সংসারের বাইরে এসে বিশ্বের ও বিশ্বদেবতার দর্শন লাভ করলাম। ༩ གག་ SSDNOO एवंशे ७७७० শান্তিনিকেতন *