পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বভারতী Sbrd পারে না । কিন্তু তাকে পরাস্ত করে উত্তীর্ণ হয়েও টিকে থাকাতেই প্ৰাণের প্রমাণ । আমাদের দেহের মধ্যে নানা শক্ৰ নানা রোগের বীজাণু- তাকে আলাদা করে যদি দেখি তো দেখব প্রত্যেক মানুষ বিকৃতির আলয় । কিন্তু আসলে রোগকে পরাস্ত করে যে স্বাস্থ্যকে দেখা যাচ্ছে সেইটেই সত্য। দেহের মধ্যে যেমন লড়াই চলছে, প্রত্যেক অনুষ্ঠানের মধ্যেই তেমনি ভালেমদের একটা দ্বন্ধ আছে- কিন্তু সেটা পিছন দিকের কথা । এর মধ্যে স্বাস্থ্যের তত্ত্বটাই বড়ো । আমি এমন কথা কখনো বলি নি, আজও বলি নে যে, আমি যে কথা বলব। তাই বেদবাক্যসেরকম অধিনেতা আমি নই। অসাধারণ তত্ত্ব তো আমি কিছু উদভাবন করিনি ; সাধকেরা যে অখণ্ড পরিপূর্ণ জীবনের কথা বলেন সে কথা যেন সকলে স্বীকার করে নেন । এই একটি কথা ধ্রুব হয়ে থােক। তার পরে পরিবর্তমান পরিবর্ধমান সৃষ্টির কাজ সকলে মিলেই হবে। মানুষের দেহে যেমন অস্থি, এই অনুষ্ঠানের মধ্যেও তেমনি একটি যান্ত্রিক দিক আছে। এই অনুষ্ঠান যেন প্ৰাণবান হয়, কিন্তু যাত্রই যেন মুখ্য না হয়ে ওঠে ; হৃদয়-প্ৰাণ-কল্পনার সঞ্চারণের পথ যেন থাকে । আমি কল্পনা করি, এখানকার বিদ্যালয়ের আস্বাদন এক সময়ে ধারা পেয়েছেন, এখানকার প্রাণের সঙ্গে প্ৰাণকে মিলিয়েছেন, অনেক সময় হয়তো তারা এখানে অনেক বাধা পেয়েছেন, দুঃখ পেয়েছেন, কিন্তু দূরে গেলেই পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে পান। এখানে যা বড়ো যা সত্য। আমার বিশ্বাস, সেই দৃষ্টিমান অনেক ছাত্র ও কমী নিশ্চয়ই আছেন, নইলে অস্বাভাবিক হত । এক সময়ে তারা এখানে নানা আনন্দ পেয়েছেন, সখ্যবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন- এর প্রতি তাঁদের মমতা থাকবে না। এ হতেই পারে না । আমি আশা করি, কেবল নিক্রিয় মমতা দ্বারা নয়, এই অনুষ্ঠানের অন্তর্বতী হয়ে যদি তাঁরা এর শুভ ইচ্ছা করেন, তবে এর প্রাণের ধারা অব্যাহত থাকতে পারবে, যন্ত্রের কঠিনতা বড়ো হয়ে উঠতে পারবে না। এক সময়ে এখানে যারা ছাত্র ছিলেন, যারা এখানে কিছু পেয়েছেন, কিছু দিয়েছেন, তাঁরা যদি অন্তরের সঙ্গে একে গ্ৰহণ করেন তবেই এ প্ৰাণবান হবে । এইজন্য আজ আমার এই ইচ্ছা প্ৰকাশ করি যে, যারা জীবনের অর্ঘ্য এখানে দিতে চান, যারা মমতা দ্বারা একে গ্ৰহণ করতে চান, তাদের অন্তর্বর্তী করে নেওয়া যাতে সহজ হয়। সেই প্ৰণালী যেন আমরা অবলম্বন করি । ধারা একদা এখানে ছিলেন তারা সম্মিলিত হয়ে এই বিদ্যালয়কে পূর্ণ করে রাখুন। এই আমার অনুরোধ। অন্য সব বিদ্যালয়ের মতো এ আশ্রম যেন কলের জিনিস না হয়- তা করব না বলেই এখানে এসেছিলাম । যন্ত্রের অংশ এসে পড়েছে, কিন্তু সবার উপরে প্রাণ যেন সত্য হয়। সেইজন্যই আহবান করি তাদের যারা এক সময়ে এখানে ছিলেন, যাদের মনে এখনো সেই স্মৃতি উজ্জ্বল হয়ে আছে। ভবিষ্যতে যদি আদর্শের প্রবলতা ক্ষীণ হয়ে আসে। তবে সেই পূর্বতনেরা যেন একে প্রাণধারায় সঞ্জীবিত করে রাখেন, নিষ্ঠা দ্বারা শ্ৰদ্ধা দ্বারা এর কর্মকে সফল করেন- এই আশ্বাস পেলেই আমি নিশ্চিন্তু হয়ে যেতে পারি। ৮ পৌষ ১৩৪১ शन »७8ऽ শান্তিনিকেতন SA এই আশ্রম-বিদ্যালয়ের কোথা থেকে আরম্ভ, কোন সংকল্প নিয়ে কিসের অভিমুখে এ চলেছে, সে কথা প্রতি বর্ষে একবার করে ভাববার সময় আসে- বিশেষ করে আমার- কেননা অনুভৱ করি, আমার বলবার সময় আর বেশি নেই। এর ইতিহাস বিশেষ নেই ; যে কাজের ভার নিয়েছিলাম তা নিজের প্রকৃতিসংগত নয়। পূর্বে সমাজ থেকে দূরে কোণে মানুষ হয়েছি, আমি যে পরিবারে মানুষ হয়েছিলাম, লোকসমাজের সঙ্গে সংযোগ ছিল তার অল্প। যখন সাহিত্যে প্রবৃত্ত হলাম। সে সময়ও নিত্বতে নদীতীরে কাটিয়েছি। এমন সময় এই বিদ্যালয়ের আহবান এল। এই কথাটা অনুভব করেছিলাম, শহরের খাচায় আবদ্ধ হয়ে মানবশিশু নির্বািসনদণ্ড ভোগ করে, তার শিক্ষাও বিদ্যালয়ে