পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন ব্ৰহ্মচর্যাশ্রম V2O) কর্তব্যবোধে ধনসম্পদ ও সংসার ত্যাগ করতে হবে তখন কিছুমাত্র ব্যাকুল হবে না। তা হলে তোমাদের দ্বারা ভারতবর্ষ আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠবে- তোমরা যেখানে থাকবে সেইখানেই মঙ্গল হবে, তোমরা সকলের ভালো করবে এবং তোমাদের দেখে সকলে ভালো হবে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা কিরূপ শিক্ষা ও ব্রত অবলম্বন করতেন ? তঁরা বাল্যকালে গৃহ ছেড়ে নির্জনে গুরুর বাড়িতে যেতেন। সেখানে খুব কঠিন নিয়মে নিজেকে সংযত করে থাকতে হত । গুরুকে একান্তমনে ভুক্তি করতেন, গুরুর সমস্ত কাজ করে দিতেন। শুরুর জন্যে কাঠ কাটা, জল তুলে আনা, তার গোরু চরানো, তার জন্যে গ্রাম থেকে ভিক্ষে করে আনা, এই সমস্ত তঁদের কাজ ছিল, তা ঠাৱা যত বড়ো ধনীর পুত্র হােন-না। শরীর-মনকে একেবারে পবিত্র রাখতে হবে- তাদের শরীরে ও মনে কোনো-রকম দোষ একেবারে স্পর্শ করত না । গেরুয়া বস্ত্র পরতেন, কঠিন| বিছানায় শুতেন, পয়ে জুতো নেই, মাথায় ছাতা নেই- সাজসজ্জা বড়োমানুষ কিছুমাত্র নেই। সমস্ত মনের সমস্ত চেষ্টা কেবল শিক্ষালাভে, কেবল সত্যের সন্ধানে, কেবল নিজের দৃশ্যপ্রবৃত্তি-দমন, নিজের ভালো গুণকে ফুটিয়ে তুলতে নিযুক্ত থাকত । তোমাদের সেইরকম কষ্ট স্বীকার করে সেই কঠিন নিয়মে, সকলপ্রকার বড়োমানুষকে তুচ্ছ করে দিয়ে এখানে গুরুগৃহে বাস করতে হবে। গুরুকে সর্বতোভাবে শ্রদ্ধা করবে, মনে বাক্যে কাজে তাকে লেশমাত্র অবজ্ঞা করবে না । শরীরকে পবিত্র করে রাখবে- কোনো দোষ যেন স্পর্শ না করে । মনকে গুরু-উপদেশের সম্পূর্ণ অধীন করে রাখবে। আজ থেকে তোমরা সত্যব্রত গ্রহণ করলে। মিথ্যাকে কায়মনোবাক্যে দূরে রাখবে। প্রথমত সত্যু জািনবার জন্য সবিনয়ে সমস্ত মন বুদ্ধি ও চেষ্টা দান করবে, তার পরে যা সত্য বলে জানবে তা নিৰ্ভয়ে ८ १ & 0 0 || আজ থেকে তোমাদের অভয়ব্ৰত। ধর্মকে ছাড়া জগতে তোমাদের ভয় করবার আর কিছুই নেই। বিপদ না, মৃত্যু না, কষ্ট না- কিছুই তোমাদের ভয়ের বিষয় নয়। সর্বদা দিবারাত্রি প্রফুল্লচিত্তে প্রসন্নমুখে শ্রদ্ধার সঙ্গে সত্য-লাভে ধর্ম-লাভে নিযুক্ত থাকবে । আজ থেকে তোমাদের পূণ্যব্ৰত । যা-কিছু অপবিত্র কলুষিত, যা-কিছু প্ৰকাশ করতে লজ্জা বোধ হয়, তা সর্বপ্রযত্নে প্ৰাণপণে শরীর-মন থেকে দূর করে প্রভাতের শিশিরসিক্ত ফুলের মতো পুণ্যে ধর্মে বিকশিত হয়ে থাকবে । আজ থেকে তোমাদের মঙ্গলব্রত । যাতে পরস্পরের ভালো হয় তাই তোমাদের কর্তব্য । সেজন্যে নিজের সুখ নিজের স্বাৰ্থ বিসর্জন । এক কথায় আজ থেকে তোমাদের ব্ৰহ্মব্ৰত । এক ব্ৰহ্ম তোমাদের অন্তরে বাহিরে সর্বদা সকল স্থানেই আছেন। তঁর কাছ থেকে কিছুই লুকোবার জো নেই। তিনি তোমাদের মনের মধ্যে স্তব্ধ হয়ে দেখছেন । যখন যেখানে থাক, শয়ন কর, উপবেশন কর, তঁর মধ্যেই আছ, তার মধ্যেই সঞ্চরণ করছি । তোমার সর্বাঙ্গে তার স্পর্শ রয়েছে- তোমার সমন্ত ভাবনা তারই গোচরে রয়েছে । তিনিই তোমাদের একমাত্র ভয়, তিনিই তোমাদের একমাত্ৰ অভয় । প্রত্যহ অন্তত একবার তাকে চিন্তা করবে। ঠাকে চিন্তা করবার মন্ত্র আমাদের বেদে আছে। এই মন্ত্র আমাদের ঋষির দ্বিজের প্রত্যহ উচ্চারণ করে জগদীশ্বরের সম্মুখে দণ্ডায়মান হতেন। সেই মন্ত্ৰ, হে সীেমা, তুমিও আমার সঙ্গে সঙ্গে একবার উচ্চারণ করো ; ঔ ভুর্ভুবঃ স্বঃ তৎসবিতুৰ্বরেণ্যং ভগো দেবস্য ধীমহি ধিয়ে যো নঃ প্ৰচোদয়াৎ। o (oryeoir ¥በቫ Sooክr