পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন ব্ৰহ্মচর্যাশ্রম OOC) শৌখিনতা দূর করা চাই । ] দ্বিতীয়ত নিষ্ঠা ! উঠা বসা পড়া খেলা জান আহার ও সর্বপ্রকার পরিচ্ছন্নতা ও শুচিতা সম্বন্ধে সমস্ত নিয়ম একান্ত দৃঢ়তার সহিত পালনীয়। ঘরে বাহিরে শয্যায় বসনে ও শরীরে কোনোপ্রকার মলিনতা প্রশ্রয় দেওয়া না হয় । যেখানে কোনো ছাত্রের কাপড় কম আছে সেখানে সে যেন কাপড়-কাচা সাবান দিয়া স্বহস্তে প্রত্যহ নিজের কাপড় কাচে, ও ব্যবহার্য গাড় মজিয়া পরিষ্কার রাখে । এবং ঘরের যে অংশে তাহার বিছানা কাপড়াচোপড় ও বই প্রভৃতি থাকে সে.অংশ যেন প্রত্যহ যথাসময়ে যথানিয়মে পরিষ্কার তকতকে করিয়া রাখে। ছেলেরা প্রত্যহ পৰ্যায়ক্রমে তাঁহাদের অধ্যাপকদের ঘরও পরিষ্কার করিয়া গুছাইয়া রাখিলে ভালো হয় । অধ্যাপকদের সেবা করা ছাত্রদের অবশ্যকর্তব্যের মধ্যে নির্ধারিত করা চাই । তৃতীয়ত ভক্তি । অধ্যাপকদের প্রতি ছাত্রদের নির্বিচারে ভক্তি থাকা চাই। তাহারা অন্যায় করিলেও তাহা বিনা বিদ্রোহে নম্রভাবে সহ্য করিতে হইবে । কোনোমতে তাহদের সমালোচনা বা নিন্দায় যোগ দিতে পরিবে না । অধ্যাপকেরা যদি কখনো পরস্পরের সমালোচনায় প্রবৃত্ত হন তবে সে সময়ে কোনো ছাত্র সেখানে উপস্থিত না থাকে তৎপ্রতি যত্নবান হইতে হইবে । কোনো অধ্যাপক ছাত্রদের সমক্ষে অন্য অধ্যাপকদের প্রতি অবজ্ঞজনক ব্যবহার, অসহিষ্ণুতা বা রোষ প্রকাশ না করেন সে দিকে সকলের মনযোগ থাকা কর্তব্য । ছাত্ৰগণ অধ্যাপকদিগকে প্রত্যহ প্ৰণাম করিবে । অধ্যাপকগণ পরম্পরকে নমস্কার করিবেন । পরস্পরের প্রতি শিষ্টাচার ছাত্রদের নিকট যেন আদর্শস্বরূপ বিদ্যমান श8 | বিলাসত্যাগ, আত্মসংযম, নিয়মনিষ্ঠা, গুরুজনে ভক্তি সম্বন্ধে আমাদের দেশের প্রাচীন আদর্শের প্রতি ছাত্রদের মনোযোগ অনুকুল অবসরে আকর্ষণ করিতে হইবে । -যাহারা (ছাত্র বা অধ্যাপক) হিন্দুসমাজের সমস্ত আচার যথাযথ পালন করিতে চান তাহাদিগকে কোনোপ্রকারে বাধা দেওয়া বা বিদ্রুপ করা এ বিদ্যালয়ের নিয়মবিরুদ্ধ। রন্ধনশালায় বা আহারস্থানে হিন্দু-আচার-বিরুদ্ধ কোনো অনিয়মের দ্বারা কাহাকেও ক্লেশ দেওয়া হইবে না । আহ্নিক । ছাত্রদিগকে গায়গ্ৰীমন্ত্র মুখস্থ করাইয়া বুঝাইয়া দেওয়া হইয়া থাকে। আমি. যে ভাবে গায়ন্ত্রী ব্যাখ্যা করি তাহা সংক্ষেপে নিম্নে লিখিলাম : ॐ सूचः श्व8এই অংশ গায়ন্ত্রীর ব্যাহতি নামে খ্যাত । চারি দিক হইতে আহরণ করিয়া আনার নাম ব্যাহতি । প্ৰথম ধ্যানকালে ভূলোক ভুবর্লোক ও স্বর্লোেক অর্থাৎ সমস্ত বিশ্বজগৎকে মনের মধ্যে আহরণ করিয়া আনিতে হইবে- তখনকার মতো মনে করিতে হইবে আমি সমস্ত বিশ্বজগতের মধ্যে দাড়াইয়াছি- আমি এখন কেবলমাত্র কোনো বিশেষ দেশবাসী নহি । বিশ্বজগতের মধ্যে দাড়াইয়া বিশ্বজগতের যিনি সবিতা, যিনি সৃষ্টিকর্তা, তাহারই বরণীয় জ্ঞান ও শক্তি ধান করিতে হইবে । মনে করিতে হইবে এই ধারণাতীত বিপুল বিশ্বজগৎ এই মুহুর্তে এবং প্রতি মুহুর্তেই তাহা হইতে বিকীর্ণ হইতেছে। তাহার এই-যে অসীম শক্তি যাহার দ্বারা ভুর্ভুবঃস্বর্লোেক অবিশ্রাম প্রকাশিত হইতেছে, আমার সহিত র্তাহার অব্যবহিত সম্পর্ক কী সূত্রে । কোন সূত্র অবলম্বন করিয়া তাহাকে ধান করিব । ধিয়ো যো নঃ প্ৰচোদয়াৎ- যিনি আমাদিগকে বুদ্ধিবৃত্তিসকল প্রেরণ করিতেছেন, সেই ধীসূত্রেই তাহাকে ধ্যান করিব । সূর্যের প্রকাশ আমরা প্রত্যক্ষভাবে কিসের দ্বারা জানি । সূৰ্য আমাদিগকে যে কিরণ প্রেরণ করিতেছে সেই কিরণের দ্বারা। সেইরূপ বিশ্বজগতের সবিতা আমাদের মধ্যে অহরহ যে ধীশক্তি প্রেরণ করিতেছেন, যে শক্তি থাকার দরুন আমি নিজেকে ও বাহিরের সমস্ত বিশ্বব্যাপারকে উপলব্ধি করিতেছি- সে ধীশক্তি তাহারই শক্তি এবং সেই ধীশক্তি দ্বারাই তাহারই শক্তি প্রত্যক্ষভাবে অন্তরের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অন্তরতম রূপে অনুভব করিতে পারি। বাহিরে যেমন ভুর্ভুবন্ধস্বর্লোকের সবিতা রূপে তাহাকে জগৎচরাচরের মধ্যে উপলব্ধি করি, অন্তরের মধ্যেও সেইরূপ আমার ধীশক্তির অবিশ্রাম প্রেরয়িতা বলিয়া ঠাঁহাকে অব্যবহিতভাবে উপলব্ধি করিতে পারি। বাহিরে জগৎ এবং আমার অন্তরে