পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন ব্ৰহ্মচর্যাশ্রম ○O2 বিদ্যালয়ের ভূতানিয়োগ, তাহদের বেতন নির্ধারণ বা তাহাদিগকে অবসর দান, তাহদের পরামর্শমত আপনি করিবেন। মাস শেষে আগামী মাসের একটি আনুমানিক বাজেট সমিতির নিকট হইতে পাস করাইয়া লাইবেন । বাজেটের অতিরিক্ত খরচ করিতে হইলে তাহদের লিখিত সম্মতি লইবেন । খাতায় প্রত্যহ ঠাহীদের সহি লইবেন । সপ্তাহ অন্তর সপ্তাহের হিসাব ও মাসান্তে মাসকাবার তঁহাদের স্বাক্ষরসহ আমাকে দিতে হইবে । সায়াহ্নে ছেলেদের খেলা শেষ হইয়া গেলে সমিতির নিকট আপনার সমন্ত মন্তব্য জানাইবেন ও খাতায় সহি লইবেন । ভাণ্ডারের ভার আপনার উপর । জিনিসপত্র ও গ্রন্থ প্রভৃতি সমস্ত আপনার জিম্মায় থাকিবে । জিনিসপত্রের তালিকায় আপনি সমিতির স্বাক্ষর লাইবেন । কোনো জিনিস নষ্ট হইলে, হরাইলে বা বাড়িলে তাহদের স্বাক্ষরসহ তাহা জমা খরচ করিয়া লইবেন । আহারের সময় উপস্থিত থাকিয়া ছাত্রদের ভোজন পর্যবেক্ষণ করিবেন। ছাত্রদের স্বাস্থ্যের প্রতি সর্বদা দৃষ্টি রাখিবেন । তাহাদের জিনিসপত্রের পারিপাট্য, তাহাদের ঘর শরীর ও বেশভূষার নির্মলতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি মনোযোগী হইবেন । ছাত্রদের চরিত্র সম্বন্ধে সন্দেহজনক কিছু লক্ষ্য করিলেই সমিতিকে জানাইয়া তাহা আরম্ভেই সংশোধন করিয়া লইবেন । বিদ্যালয়ের ভিতরে বাহিরে, রান্নাঘরে ও তাহার চতুদিকে, পায়খানার কাছে কোনোরূপ অপরিষ্কার না থাকে আপনি তাহার তত্ত্বাবধান করবেন। গোশালায় গোরু মহিষ ও তাহদের খাদ্যের ও ভূত্যের প্রতি দৃষ্টি রাখিবেন । বিদ্যালয়ের সংলগ্ন ফুল ও তরকারির বাগান আপনার হাতে । সেজন্য বীজ ক্রয়, সার সংগ্রহ ও মধ্যে মধ্যে ঠিক লোক নিয়োগ সমিতিকে জানাইয়া করিতে পরিবেন । শান্তিনিকেতনের আশ্রমের সহিত বিদ্যালয়ের সংস্রব প্রার্থনীয় নহে। জিনিসপত্র ক্রয়, বাজার করা ও বাগান তৈরির সহায়তায় মাঝে মাঝে আশ্রমের মালীদের প্রয়োজন হইতে পারে- কিন্তু অন্যান্য ভূতাদের সহিত যোগরক্ষা না করাই শ্ৰেয় । ঠিকা লোক প্রভৃতি প্রয়োজন হইলে সর্দারকে বা মালী দিগকে, রবীন্দ্ৰ সিংহকে বা তাহার সহকারীকে জানাইয়া সংগ্ৰহ করিবেন । শান্তিনিকেতনে ঔষধ লইতে রোগী আসিলে তাহাদিগকে হোমিওপ্যাথি ঔষধ দিবেন। যে যে ঔষধের যখন প্রয়োজন হইবে আমাকে তালিকা করিয়া দিলে আমি আনাইয়া দিব । শান্তিনিকেতন-আশ্ৰম-সম্পর্কীয় কেহ বিদ্যালয়ের প্রতি কোনোপ্রকার হস্তক্ষেপ করিলে- বা সেখানকার ভৃত্যদের কোনো দুর্বব্যবহারে বিরক্ত হইলে আমাকে জানাইবেন । ১ বাংলা ১২৬৯ সালে মহর্ষি দেবেন্দ্ৰনাথ শান্তিনিকেতনের জমির পাটা লইয়াছিলেন ; ১২৯৪ সালে "নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনার জন্য একটি আশ্রম সংস্থাপনের অভিপ্ৰায়ে ও তাহার অনুকুল কাৰ্যসম্পাদনাৰ্থে মহর্ষি এই সম্পত্তি ট্রস্টাদিগের হাতে অৰ্পণ করেন ও এই আশ্রমের ব্যয়নির্বহার্থে আর্থিক ব্যবস্থা করিয়া দেন। ‘এই ট্রস্টের উদ্দিষ্ট আশ্রমধর্মের উন্নতির জন্য ট্রস্টীগণ শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মবিদ্যালয় ও পুস্তকালয় সংস্থাপন করিতে পরিবেন।' পরে ১৩০৮ সালে মহৰ্ষির অনুমতিক্রমে তাহার ধর্ম দীক্ষােবার্ষিকীতে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে শ্ৰীৰচৰ্যক্রমের প্রতিষ্ঠা করেন ; এ ক্ষেত্রে “আশ্রম বলিতে উক্ত ট্রস্ট অনুযায়ী পূর্বাগত ব্যবস্থা, ও বিদ্যালয় লিতে নবপ্রতিষ্ঠিত ব্ৰহ্মচর্যােপ্রম বুঝতে হইবে। পরে আশ্রম ও বিদ্যালয় সাধারণত সমর্থক হইয়াছে।-