পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V8 by ब्रदीक्ष-अप्नादी বড়েদিন র্যাকে আমরা পরম মানব বলে স্বীকার করি তার জন্ম ঐতিহাসিক নয়, আধ্যাত্মিক ৷ প্ৰভাতের আলো সদ্য-প্ৰভাতের নয়, সে চির-প্রভাতের। আমরা যখনই তাকে দেখি তখনই সে নৃতন, কিন্তু তবু সে চিরন্তন। নব নব জাগরণের মধ্যে দিয়ে সে প্রকাশ করে অনাদি আলোককে । জ্যোতির্বিদ জানেন নক্ষত্রের আলো যেদিন আমাদের চােখে এসে পৌঁছয় তার বহু যুগ পূর্বেই সে যাত্রা করেছে। তেমনি সত্যের দূতকে যেদিন আমরা দেখতে পাই সেইদিন থেকেই তার বয়সের আরম্ভ নয়— সত্যের প্রেরণা রয়েছে মহাকালের অস্তরে । কোনো কালে অন্ত নেই তার আগমনের এই কথা যেন জানতে 叶府1 দেওয়া । তিন শত চৌষট্টি দিন অস্বীকার করে তিন-শত-পয়ষট্টিতম দিনে তার স্তব দ্বারা আমরা নিজের জড়ত্বকে সাস্তুনা দিই। সত্যের সাধনা এ নয়, দায়িত্বকে অস্বীকার করা মাত্র । এমনি করে মানুষ নিজেকে ভোলায়। নামগ্রহণের দ্বারা কর্তব্য রক্ষা করি, সত্যগ্রহণের দুরূহ অধ্যবসায় পিছনে পড়ে যায় । কর্মের মধ্যে তাকে স্বীকার করলেম না, স্তবের মধ্যে সহজ নৈবেদ্য দিয়েই খালাস । যারা এলেন বাহ্যিকতা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে তাদেরকে বন্দী করলেম বাহ্যিক অনুষ্ঠানের পুনরাবৃত্তির NJ | আজ আমি লজ্জা বোধ করেছি। এমন করে একদিনের জন্যে আনুষ্ঠানিক কর্তব্য সমাধা করবার কাজে আহুত হয়ে । জীবন দিয়ে যুঁকে অঙ্গীকার করাই সত্য, কথা দিয়ে তার প্রাপ্য চুকিয়ে দেওয়া নিরতিশয় ব্যর্থতা । আজ তার জন্মদিন এ কথা বলব কি পঞ্জিকার তিথি মিলিয়ে । অন্তরে যে দিন ধরা পড়ে না। সে দিনের উপলব্ধি কি কালগণনায়। যেদিন সত্যের নামে ত্যাগ করেছি, যেদিন অকৃত্রিম প্রেমে মানুষকে ভাই বলতে পেরেছি, সেইদিনই পিতার পুত্র আমাদের জীবনে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেইদিনই বড়োদিন- যে তারিখেই আসুক। আমাদের জীবনে তার জন্মদিন দৈবাৎ আসে, কিন্তু ক্রুশে বিদ্ধ তীর মৃত্যু সে তো আসে দিনের পর দিন। জানি আজ বিশেষ দিনে দেশে দেশে গির্জায় গির্জায় ঠার স্তবধ্বনি উঠছে, যিনি পরমপিতার বার্তা এনেছেন মানবসন্তানের কাছে- আর সেই গির্জার বাইরে রক্তাক্ত হয়ে উঠছে পৃথিবী ভ্ৰাতৃহত্যায়। দেবালয়ে স্তবমন্ত্রে তীকে আজ যারা ঘোষণা করছে তারাই কামানের গর্জনে তাকে অস্বীকার করছে, আকাশ থেকে মৃত্যুবর্ষণ করে তার বাণীকে অতি ভীষণ ব্যঙ্গ করছে। লোভ আজ নিদারুণ, দুর্বলের অন্নগ্ৰাস আজ লুষ্ঠিত, প্রবলের সামনে দাঁড়িয়ে খৃষ্ট্রের দোহাই দিয়ে মার বুকে পেতে নিতে সাহস নেই যাদের তারাই আজ পূজাবেদীর সামনে দাঁড়িয়ে মৃত্যুশূলবিদ্ধ সেই কারুণিকের জয়ধ্বনি করছে অভ্যস্ত বচন আবৃত্তি করে। তবে কিসের উৎসব আজ । কেমন করে জািনব খৃষ্ট জন্মেছেন পৃথিবীতে। আনন্দ করব কী নিয়ে। এক দিকে র্যাকে মারছি নিজের হাতে, আর-এক দিকে পুনরুজ্জীবন প্রচার করব শুধুমাত্ৰ কথায়। আজও তিনি মানুষের ইতিহাসে প্রতিমুহূর্তে ক্রুশে বিদ্ধ হচ্ছেন । । প্ৰাণোৎসর্গ করলেন এই মানবসত্যের বৈদীতে । চিরদিনের জন্যে এই মিলনের আহবান রেখে গেলেন আমাদের কাছে । তার আহবানকে আমরা যুগে যুগে প্রত্যাখ্যান করেছি। বেড়েই চলল তার বাণীর প্রতিবাদ করবার অতি বিপুল আয়োজন । বেদমন্ত্রে আছে তিনি আমাদের পিতা : পিতা নোহসি । সেইসঙ্গে প্রার্থনা আছে ; পিতা নো বোধি । তিনি যে পিতা এই বোধ যেন আমাদের মনে জাগে । সেই পিতার বোধ যিনি দান করতে