পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WOVO রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী আমাদের চাষী বলে, মাটি হইতে বাপদাদার আমল ধরিয়া যাহা পাইয়া আসিতেছি তাহার বেশি। পাইব কী করিয়া। এ কথা চাষীর মুখে শোভা পায়, পূর্বপ্রথা অনুসরণ করিয়া চলাই তাঁহাদের শিক্ষা। কিন্তু এমন কথা বলিয়া আমরা নিস্কৃতি পাইব না। এই মাটিকে এখনকার প্রয়োজন-অনুসারে বেশি। করিয়া ফলাইতে হইবে- নহিলে আধাপেটা খাইয়া, জ্বরে অজীর্ণরোগে মরিতে কিংবা জীবন্মুত হইয়া থাকিতে হইবে । এই মাটির উপরে মন এবং বুদ্ধি খরচ করিলে এই মাটি হইতে যে আমাদের দেশের মোট চাষের ফসলের চেয়ে অনেক বেশি আদায় করা যায় তাহার অনেক দৃষ্টান্ত আছে। আজকাল চাষকে মুখের কাজ বলা চলে না, চাষের বিদ্যা এখন মস্ত বিদ্যা হইয়া উঠিয়াছে। বড়ো বড়ো কলেজে এই বিদ্যার আলোচনা চলিতেছে, সেই আলোচনার ফলে ফসলের এত উন্নতি হইতেছে যে তাহা আমরা কল্পনা করিতে পারি না । তাই বলিতেছি, গ্রামটুকুকে ফসল জোগান দিতাম যে প্রণালীকে, সমস্ত পৃথিবীকে ফসল জোগান দিতে হইলে সে প্ৰণালী খাটিবে না । কেহ কেহ এমন কথা মনে করেন যে, আগেকার মতন ফসল নিজের প্রয়ােজনের জন্যই খাটানাে ভালো, ইহা বাহিরে চালান দেওয়া উচিত নহে। সমস্ত পৃথিবীর সঙ্গে ব্যবহার বন্ধ করিয়া, একঘরে হইয়া দুই বেলা দুই মুঠ ভাত বেশি করিয়া খাইয়া নিদ্ৰা দিলেই তো আমাদের চলিবে না। সমস্ত পৃথিবীর সঙ্গে দেনাপাওনা করিয়া তবে আমরা মানুষ হইতে পারিব। যে জাতি তাহা না করিবে বর্তমান কালে সে টিকিতে পরিবে না । আমাদের ধন্যধান্য, ধর্মকর্ম, জ্ঞানধ্যান সমস্তই আজ বিশ্বপূথিবীর সঙ্গে যোগসাধনের উপযোগী করিতেই হইবে ; যাহা কেবলমাত্র আমােদর নিজের ঘরে নিজের গ্রামে চলিবে তাহা চলিবেই না । সমস্ত পৃথিবী আমাদের দ্বারে আসিয়া হাক দিয়াছে, অয়মহং ভোঃ ! তাহাতে সাড়া না দিলে শাপ লাগিবে, কেহ আমাদিগকে বঁাচাইতে পরিবে না | প্ৰাচীনকালের গ্রাম্যতার গণ্ডীর মধ্যে আর আমাদের ফিরিবার রাস্তা নাই । তাই আমাদের দেশের চাষের ক্ষেত্রের উপরে সমস্ত পৃথিবীর জ্ঞানের আলো ফেলিবার দিন আসিয়াছে। আজ শুধু একলা চাষীর চাষ করিবার দিন নাই, আজ তাহার সঙ্গে বিদ্বানকে, বৈজ্ঞানিককে যোগ দিতে হইবে । আজ শুধু চাষীর লাঙলের ফলার সঙ্গে আমাদের দেশের মাটির সংযোগ যথেষ্ট নয়- সমস্ত দেশের বুদ্ধির সঙ্গে, বিদ্যার সঙ্গে, অধ্যবসায়ের সঙ্গে, তাহার সংযোগ হওয়া চাই। এই কারণে বীরভূম জেলা হইতে এই যে “ভূমিলক্ষ্মী কাগজখানি বাহির হইয়াছে ইহাতে উৎসাহ অনুভব করিতেছি। বস্তুত লক্ষ্মীর সঙ্গে সরস্বতীকে না মিলাইয়া দিলে আজকালকার দিনে ভূমিলক্ষ্মীর যথার্থ সাধনা হইতে পরিবে না । এইজন্য র্যাহারা এই পত্রিকার উদ্যোগী তাহাদিগকে আমার অভিনন্দন জানাইতেছি এবং এই কামনা করিতেছি তীহাদের এই শুভ দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের জেলায় জেলায় ব্যাপ্ত হইয়া দেশের কৃষিক্ষেত্র এবং চিত্তক্ষেত্ৰকে এককালে সফল করিয়া তুলুক । আশ্বিন ১৩২৫ শ্ৰীনিকেতন সাংবাৎসরিক উৎসবােপলক্ষে কথিত বসন্তের বাণী অরণ্যের সব জায়গাতেই প্রবাহিত হচ্ছে দক্ষিণ - সমীরণে ; হয়তো কোনো গাছ নিজীব, এই আহবানের সে জবাব দিলে না- সে তার পত্রপুষ্প বিকশিত করলে না, সে মুছিত হয়েই রইল। যে গাছের অন্তরে রসের ধারা আছে, বসন্তের রস-উৎসবের নিমন্ত্রণে সে পত্রপুষ্পে বিকশিত হয়ে ওঠে। বিশ্বপ্রাণের আহবানে যখন বিশেষ প্ৰাণের মধ্যে তরঙ্গ ওঠে তখনই তো উৎসব । আমাদের দেশেও নিয়ত ডাক পড়ছে, দৈববাণী আকাশে বাতাসে নিয়তই নিশ্বসিত । যেখানে সে