পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y9ፃW» রবীন্দ্র-রচনাবলী মহাৰ্যতাকেও স্বীকার করেছি। তাল ঠোকার স্পৰ্থকেই আমরা বীরত্বের একমাত্র সাধনা বলে মনে কবি নি। আমরা জানি, যে গ্ৰীস একদা সভ্যতার উচ্চচূড়ায় উঠেছিল তার নৃত্যগীত চিত্রকলা নাট্যকলায় সীেসাম্যের অপরূপ ঔৎকৰ্য কেবল বিশিষ্ট সাধারণের জন্যে ছিল না, ছিল সর্বসাধারণের জন্যে । এখনো আমাদের দেশে অকৃত্রিম পত্নীহিতৈষী অনেকে আছেন ধারা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে পল্লীর প্রতি কর্তব্যকে সংকীর্ণ করে দেখেন। তাদের পল্লীসেবার বরাদ্দ কৃপণের মপে, অর্থাৎ তাদের মনে যে পরিমাণ দয়া সে পরিমাণ সম্মান নেই। আমার মনের ভাব তার বিপরীত। সচ্ছলতার পরিমাপে সংস্কৃতির পরিমাপ একেবারে বর্জনীয়। তহবিলের ওজন-দরে মনুষ্যত্বের সুযোগ বণ্টন করা বণিগকৃত্তির নিকৃষ্টতম পরিচয় । আমাদের অর্থসামর্থের অভাব-বশত আমার ইচ্ছাকে কর্মক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে প্রচলিত করতে পারিনি- তা ছাড়া ধারা কর্মকরেন তাদেরও মনােবৃত্তিকে ঠিকমত তৈরি করতে সময় লাগবে। তার পূর্বে হয়তো আমারও সময়ের অবসান হবে, আমি কেবল আমার ইচ্ছা! জানিয়ে যেতে পারি। ধারা স্কুল পরিমাণের পূজারি তারা প্রায় বলে থাকেন যে, আমাদের সাধনক্ষেত্রের পরিধি নিতান্ত সংকীর্ণ, সুতরাং সমস্ত দেশের পরিমাণের তুলনায় তার ফল হবে অকিঞ্চিৎকর । এ কথা মনে রাখা উচিত- সত্য প্রতিষ্ঠিত আপন শক্তিমহিমায়, পরিমাণের দৈর্ঘ্যে প্রন্থে নয় । দেশের যে অংশকে আমরা সত্যের দ্বারা গ্ৰহণ করি সেই অংশেই অধিকার করি সমগ্ৰ ভারতবর্ষকে । সূক্ষ্ম একটি সলতে যে শিখা বহন করে সমস্ত বাতির জ্বলা সেই সালতেরই মুখে । আজকের দিনের প্রদর্শনীতে শ্ৰীনিকেতনের একটিমাত্র বিশেষ কর্মপ্ৰচেষ্টার পরিচয় দেওয়া হল । এই চেষ্টা ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত হয়েছে এবং ক্রমশ পল্লবিত হচ্ছে। চারি দিকের গ্রামের সহযোগিতার মধ্যে একে পরিব্যাপ্ত করতে এবং তার সঙ্গে সামঞ্জস্য স্থাপন করতে সময় লেগেছে, আরো লাগবে । তার কারণ আমাদের কাজ কারখানা ঘরের নয়, জীবনের ক্ষেত্রে এর অভ্যর্থনা । অর্থ না হলে একে বঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলেই আমরা আশা করি এই সকল শিল্পকােজ আপনি উৎকর্যের দ্বারাই কেবল যে 'সম্মান পাবে তা নয়, আত্মরক্ষার সম্বল লাভ করবে । সবশেষে তোমাদের কাছে আমার চরম আবেদন জানাই । তোমরা রাষ্ট্রপ্রধান। একদা স্বদেশের রাজার দেশের ঐশ্বর্যবৃদ্ধির সহায়ক ছিলেন । এই ঐশ্বর্য কেবল ধনের নয়, সৌন্দর্যের । অর্থাৎ কুবেরের ভাণ্ডার এর জন্যে নয়, এর জন্যে লক্ষ্মীর পদ্মাসন । তোমরা স্বদেশের প্রতীক। তোমাদের দ্বারে আমার প্রার্থনা, রাজার দ্বারে নয়, মাতৃভূমির দ্বারে । সমস্ত জীবন দিয়ে আমি যা রচনা করেছি। দেশের হয়ে তোমরা তা গ্ৰহণ করো। এই কার্যে এবং সকল কার্যেই দেশের লোকের অনেক প্রতিকূলতা পেয়েছি। দেশের সেই বিরোধী বুদ্ধি অনেক সময়ে এই বলে আম্ফালন করে যে, শান্তিনিকেতনে শ্ৰীনিকেতনে আমি যে কর্মমন্দির রচনা করেছি। আমার জীবিতকালের সঙ্গেই তার অবসান। এ কথা সত্য হওয়া যদি সম্ভব হয় তবে তাতে কি আমার অগীেরব, না তোমাদের ? তাই আজ আমি তোমাদের এই শেষ কথা বলে যাচ্ছি, পরীক্ষা করে দেখে এ কাজের মধ্যে সত্য আছে কি না, এর মধ্যে ত্যাগের সঞ্চয় পূর্ণ হয়েছে কি না। পরীক্ষায় যদি প্রসন্ন হও তা হলে আনন্দিত মনে এর রক্ষণপোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করো, যেন একদা আমার মৃত্যু তোরণদ্বার দিয়েই প্রবেশ করে তোমাদের প্রাণশক্তি একে শাশ্বত আয়ু দান করতে পারে। & RV 3 kijke 9082 yes.