পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VFO রবীন্দ্র-রচনাবলী ‘তোমরা সমন্ত জমি একসঙ্গে চাষ করো ; সকলের যা সম্বল আছে, সামৰ্থ্য আছে তা একত্র করো ;তা হলে অনায়াসে ট্রাক্টর দিয়ে তোমাদের জমি চাষ করা চলবে। সকলে একত্র কাজ করলে জমির সামান্য তারতম্যে কিছু যায়-আসে না ; যা লাভ হবে তা তোমরা ভাগ করে নিতে পারবে । তোমাদের সমস্ত ফসল গ্রামে এক জায়গায় রাখবে, সেখান থেকে মহাজনেরা উপযুক্ত মূল্য দিয়ে কিনে নিয়ে যাবে।' শুনে তারা বললে, খুব ভালো কথা, কিন্তু করবে কে । আমার যদি বুদ্ধি ও শিক্ষা থাকত। তা হলে বলতুম, আমি এই দায়িত্ব নিতে রাজি আছি। ওরা আমাকে জানত। কিন্তু উপকার করব বললেই উপকার করা যায় না। অশিক্ষিত উপকারের মতো এমন সর্বনেশে আর-কিছুই নেই। আমাদের দেশে এক সময় শহরের যুবক ছাত্রেরা গ্রামের উপকার করতে লেগে গিয়েছিলেন । গ্রামের লোক তাদের উপহাস করত ; বলত, “ঐ রে চার-আনার বাবুরা আসছে!’ কী করে তারা এদের উপকার করবেনা জানে তাদের ভাষা, না আছে তাদের মনের সঙ্গে পরিচয় । তখন থেকে আমার মনে হয়েছে যে, পল্লীর কাজ করতে হবে । আমি আমার ছেলেকে আর সন্তোষকে পাঠালুম কৃষিবিদ্যা আর গোষ্ঠবিদ্যা শিখে আসতে। এইরকম নানাভাবে চেষ্টা ও চিন্তা করতে লাগলুম | ঠিক সেই সময় এই বাড়িটা কিনেছিলুম। ভেবেছিলুম, শিলাইদহে যা কাজ আরম্ভ করেছি, এখানেও তাই করব। ভাঙা বাড়ি, সবাই বলত ভূতুড়ে বাড়ি। এর পিছনে আমাকে অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে। তার পর কিছুদিন চুপ করে বসেছিলুম। অ্যাভুজ বললেন, “বেচে ফেলুন।" আমি মনে ভাবলুম, যখন কিনেছি, তখন তার একটা-কিছু তাৎপৰ্য আছে- আমার জীবনের যে দুটি সাধনা, এখানে হয়তো তার একটি সফল হবে । কবে হবে, কেমন করে হবে, তখন তা জানতুম না । অনুর্বর ক্ষেত্রেও বীজ পড়লে দেখা যায় হঠাৎ একটি অফুর বেরিয়েছে, কোনো শুভলগ্নে । কিন্তু তখন তার কোনো লক্ষণ দেখা যায় নি। সব জিনিসেরই তখন অভাব । তার পর, আন্তে আন্তে বীজ অঙ্কুরিত ठूgङ 5ब्लब्न । এই কাজে আমার বন্ধু এলমহারস্ট আমাকে খুব সাহায্য করেছেন। তিনিই এই জায়গাকে একটি স্বতন্ত্র কর্মক্ষেত্র করে তুললেন । শান্তিনিকেতনের সঙ্গে একে জড়িয়ে দিলে ঠিক হত না । এলমহারস্টের হাতে এর কাজ অনেকটা এগিয়ে গেল । গ্রামের কাজের দুটাে দিক আছে। কাজ এখান থেকে করতে হবে, সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাও করতে হবে । এদের সেবা করতে হলে শিক্ষালাভ করা চাই । সবশেষে একটি কথা তোমাদের বলতে চাই- চেষ্টা করতে হবে যেন এদের ভিতর থেকে, আমাদের অলক্ষ্যে একটা শক্তি কাজ করতে থাকে। যখন আমি ‘স্বদেশী সমাজ” লিখেছিলুম। তখন এই কথাটি আমার মনে জেগেছিল । তখন আমার বলবার কথা ছিল এই যে, সমগ্ৰ দেশ নিয়ে চিন্তা করবার দরকার নেই । আমি একলা সমস্ত ভারতবর্ষের দায়িত্ব নিতে পারব না । আমি কেবল জয় করব একটি বা দুটি ছোটাে গ্ৰাম । এদের মনকে পেতে হবে, এদের সঙ্গে একত্র কাজ করবার শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। সেটা সহজ নয়, খুব কঠিন কৃচ্ছসাধন। আমি যদি কেবল দুটি-তিনটি গ্রামকেও মুক্তি দিতে পারি অজ্ঞতা অক্ষমতার বন্ধন থেকে, তবে সেখানেই সমগ্ৰ ভারতের একটি ছোটো আদশ তৈরি হবে- এই কথা তখন মনে জেগেছিল, এখনো সেই কথা মনে হচ্ছে। এই কখনো গ্রামকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করতে হবে- সকলে শিক্ষা পাবে, গ্রাম জুড়ে আনন্দের হাওয়া বইবে, গান-বাজনা কীর্তন-পাঠ চলবে, আগের দিনে যেমন ছিল । তোমরা কেবল কখানা গ্রামকে এইভাবে তৈরি করে দাও । আমি বলব। এই কথানা গ্রামই আমার ভারতবর্ষ। তা হলেই প্রকৃতভাবে ভারতকে পাওয়া যাবে। V. See S BDBBSSSLDLL DDHtHSS tDDD BBDD uD DBD DDuSS BDB DBYSS0eLL