পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্জীপ্ৰকৃতি ObrA কর্তব্যবৃদ্ধিকে শান্ত করি। উচ্চৈঃস্বরে রাগ করি, ভাষায় লেখায় বা অন্য আকারে তাকে প্রকাশ করি। কিন্তু আমরা যতক্ষণ যথার্থভাবে দেশের লোকের পাশে গিয়ে দাড়াতে না পারব, তাদের জ্ঞানের আলোক বিতরণ না করব, তাদের জন্য প্রাণপণ ব্ৰত গ্ৰহণ না করব, পূর্ণ আত্মত্যাগ না করব, ততক্ষণ মনের এই গ্লানি ও অসন্তোষ দূর হবে না । তাই ক্ষুব্ধ কর্তব্য বুদ্ধিকে প্রশান্ত করবার জন্য আমরা নানা উন্মাদনা নিয়ে থাকি, বক্তৃতা করি, চোখ রাঙাই- আর আমার মতো যারা কাব্যরচনা করতে পারেন তারা কেউ কেউ স্বদেশী গান তৈরি করি। অথচ নিজের গ্রামের পঙ্কিলতা দূর হল না, সেখানে চিত্তের ও দেহের খাদ্যসামগ্ৰীীর ব্যবস্থা হল না । তাই হাড়িডোমেরা মদ খেয়ে চলেছে আর আমাদেরও মত্ততার অন্ত নেই । কিন্তু এমন ফাকি চলবে না। প্রতিদিন আপনাকে দেশে ঢেলে দিতে হবে, পল্লীবাসীদের পাশে গিয়ে দাড়াতে হবে । আমি একদল ছেলেকে জানি তারা নন-কো-অপারেশনের তাড়নায় পল্লীসেবা করতে এসেছিল । যতদিন তাদের কলকাতার সঙ্গে যোগ ছিল, কংগ্রেস কমিটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, ততদিন কাজ চলেছিল, তার পর সব বন্ধ হয়ে গেল । তারা হাড়িডোমের ঘরে কি তেমন করে সমস্ত মন দিয়ে ঢুকতে পেরেছেন । পাড়াগায়ের প্রতিদিনের প্রয়োজনের কথা মনে রেখে তারা কি দীর্ঘকালীসাধ্য উদ্যোগে প্রবৃত্ত হতে পেরেছেন । এতে যে উন্মাদনা নেই, মন লাগে না । কিন্তু কর্তব্য বুদ্ধির কোনোরূপ খাদ্য তো চাই, সেই খাদ্য প্রতিদিন জোগাবার সাধ্য যদি আমাদের না থাকে তা হলে কাজেই মত্ততা নিয়ে নিজেদের বীরপুরুষ মহাপুরুষ दळ कन् राष्ट्रष्ठ शं । আজকাল আমরা সমাজের তিন স্তরে তিন রকমের মদ খাচ্ছি- সত্যিকারের মদ, দুনীতির মানসিক মদ, আর কর্তব্য বুদ্ধি প্ৰশান্ত করবার মতো মদ । হাড়িডোমদের মধ্যে একরকম মদ, গ্রামের উচ্চস্তরের মধ্যে আর-একরকম মদ, আর শহরের শিক্ষিত-সাধারণের মধ্যেও একপ্রকারের মদ । তার কারণ সমাজে সব দিকেই খাদ্যের জোগানে কম পড়েছে । SVS) সমবায়ে ম্যালেরিয়া-নিবারণ অ্যান্টি-ম্যালেরিয়া সোসাইটিতে কথিত ডাক্তার গোপালচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমাদের এই কাজ উপলক্ষে কী করে মিলন হল একটু বলে রাখি। আমি নিজে অবশ্য ডাক্তার নই, এবং ম্যালেরিয়া-নিবারণ সম্বন্ধে আমার মতের কোনো মূল্য নেই। আপনারা সকলে জানেন আমাদের যে “বিশ্বভারতী’ বলে একটা অনুষ্ঠান আছে, তার অন্তর্গত করে শান্তিনিকেতনের চারি দিকে যে-সমস্ত গ্রাম আছে সে গ্রামগুলির সঙ্গে আমাদের যোগ রক্ষা করবার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের আশ্রমে আমরা প্রধানত বিদ্যাচর্চা করে থাকি বটে, কিন্তু আমার বরাবর এই মত- বিদ্যাকে, স্কুল-কলেজগুলিকে জীবনের সমগ্ৰ ক্ষেত্র হতে বিচ্ছিন্ন করলে পরে আমাদের অন্তরের সঙ্গে মিশ খায় না, তাকে জীবনের বস্তু করা যায় না । এইজন্য আমরা আমাদের ক্ষুদ্র শক্তি -অনুসারে চেষ্টা করছি চারিদিকের গ্রামের লোকের জীবনযাত্রার সঙ্গে আমাদের | বিদ্যানুশীলনের কর্মকে একত্র করতে। এই কাজ আমাদের চলছিল। এখানে এই সভাগৃহে আমাদের **সম্বন্ধে পূর্বে আলোচনা হয়েছে। ধারা সে সভাক্ষেত্রে ছিলেন তারা জানেন কিরকম ভাবে আমাদের ** হচ্ছে। এই কাজ হাতে নিয়ে প্রথমে দেখা গেল- রোগের ছবি। আমরা অব্যবসায়ী, আমাদের *দেশী সাহস ছিল না যে দেশের লোককে বলি যে, যারা অভিজ্ঞ গ্রামের রোগনিবারণ কাজে তারা