পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

°ीथकृङि । vaS পারে না, “আমি কুইনাইন দিয়ে বা ইনজেকশন করে দেশের সকল রোগ ম্যালেরিয়া কালাজ্বর নিবারণ করব।’ এমন কথা বলবার দোষ আছে, কারণ তারা কতদিন পৃথিবীতে থাকবেন। আজ বাদে কাল চলে যেতে কতক্ষণ ।। কতরকম ব্যাধি-বিপদ আছে ! যদি ব্যক্তিগত কয়েকজন লোকের উদ্যমকে একমাত্র উপায় বলে গ্রহণ করি তা হলে আমাদের দুৰ্গতির অন্ত থাকবে না । আমাদের দেশে দুর্ভাগ্যক্রমে সকলরকম দুৰ্গতি-নিবারণের জন্য আমরা বাহিরের লোকের সহায়তা বরাবর অপেক্ষা করেছি। এমন দিন ছিল যখন রাজপুরুষদের মুখাপেক্ষী হয়ে দেশ ছিল না, এমন সময় ছিল যখন দেশের জলাভাব দেশের লোক নিবারণ করেছে- অন্যান্য অভাবও দেশের লোক নিবারণ করেছে। কিন্তু তার ভিতর একটা দুর্বলতা ছিল বলে আমরা আজ পর্যন্ত দুঃখের হাত এড়াতে পারছি না। যারা সেকালে কীর্তি অর্জন করতে উৎসুক ছিল, যারা উচ্চপদস্থ ছিলেন, তাদের উপর দেশের লোক দাবি করেছে। তারা মহাশয় ব্যক্তি- তাদের উপর জল দেবার, মন্দির দেবার, অতিথিশালা করে দেবার, আরো অন্যান্য অভাব মোচন করবার দাবি করেছি- তাদের পুরস্কার ছিল ইহকালে কীর্তি ও পরকালে সদগতি। এখনকার দিনে তার ফল। এই দেখতে পাই গ্রামের লোকেরা এখন পর্যন্ত তাকিয়ে থাকে কে এসে তাদের জলদান করবে- জলদান পুণ্যকর্ম, সে পুণ্যকর্ম কে করবে। অর্থাৎ তাদের বলবার কথা এই— “আমাদের জলদান-দ্বারা তুমি আমার উপকার করছ, সেটা বড়ো কথা নয়, তুমি যে পরকালে পুরস্কার পাবে সেজন্য তুমি করবে।’ এই-যে তার প্রতি দাবি, এবং তাকে প্রলুব্ধ করবার চেষ্টা, সেটা আজ পর্যন্ত গভীরভাবে আমাদের দেশে আছে। এই একটা অসত্যের সৃষ্টি হয়েছে- সর্বসাধারণ সকলে একত্র সম্মিলিত হয়ে নিজের অভাব নিজেরা দূর করবার জন্য কখনো সংকল্প করে না। এমন দিন ছিল যখন দেশে উপকারী সুহৃদ লোকের অভাব ছিল না, সুতরাং সহজেই তখন গ্রামের উন্নতি হয়েছে, অভাব দূর হয়েছে। কিন্তু এখন সে দিনের পরিবর্তন হয়েছে, নূতন অবস্থার উপযোগী চিত্তবৃত্তি এখনো আমরা পেলুম না- এখনো যদি আমরা পুণ্যকমীি কোনো সুহৃদের উপর ভার দিই, দেশের জলাভাব, দেশের রোগ তাপ সে এসে দূর করুক, তা হলে আমাদের পরিত্রাণ নেই। এখানে বলবার কথা এই, “তোমরা দুঃখ পােচ্ছ, সে দুঃখ যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের শক্তিতে দূর করতে না পারবে ততক্ষণ যদি কোনো বন্ধু বাহির থেকে বন্ধুতা করতে আসে তাকে শত্রু বলে জেনো। কারণ তোমার ভিতর যে অভাব আছে সে তাকে চিরন্তন করে দেয়, বাহিরের অভাব দূর করবার চেষ্টা-দ্বারা । গোপালবাবু যে ব্যবস্থা করেছেন, যাকে পল্লীসেবা বলা হয়েছে, তার অর্থ তোমরা একত্র সমবেত হয়ে তোমাদের নিজের চেষ্টায় তোমাদের দুঃখ দূর করে । এ কথা তিনি বলেছেন, কিন্তু তারা (গ্রামের লোক) বিশ্বাস করতে পারে নাই যে নিজের চেষ্টায় দুঃখ দূর করা যায়। সাধারণ লোকের এমন অভিজ্ঞতা কোনো কালে ছিল না। পূর্বে অসাধারণ লোকেরা তাদের উপকার করেছে- তাদের তারা খুব সম্মান করেছে। এখনো দেখি সে দিকে তারা তাকাচ্ছে এবং আমার বিশ্বাস তাদের কেউ গোপালবাবুর উপর । ক্রুদ্ধও হতে পারে। এইজন্য- “ইনি আমাদের দিয়ে করাচ্ছেন কেন, নিজে আমাদের ঔষধপত্র দিয়ে পূণ্যসঞ্চয় করলেই তো পারেন।” একটা প্ৰচলিত গল্প আছে- একজন মা-কালীকে মানত করেছিল মোষ দেবে । অনেকদিন অপেক্ষা করে মা-কালী মোষ না পেয়ে দেখা দিলেন, তখন সে বললে, ‘মোষ দিতে পারব না, একটা ছাগল দেব।' আচ্ছ, তাই সই। তার পর ছাগল দেয় না। আবার দেখা দিলেন ; লোকটি বলল, “মা, ছাগল পাই না, একটা ফড়িং দেব।” ”আচ্ছা, তাই দাও।” তখন সে *গলোঁ, 'এতই যদি মা তোমার দয়া, তবে একটা ফড়িং নিজে ধরে খাও-না কেন।” এও তাই, আমাদেরও সেরকম অবস্থা। আমি পূর্বেও অনেকবার বলেছি, সে ঘটনাটি এই- আমাদের একটা *াশের সঙ্গে যোগ ছিল, গ্রামবাসীদের ফি বৎসর বড়ো জলাভাব হত । আমি বললাম, “তোমরা কুয়া শ্ৰেীড়ো, আমি বঁধিয়ে দেবার খরচ দেব।' তারা বললে, “মহাশয়, আপনি কি মাছের তেল দিয়ে মাছ সাজতে চান ? আমরা খরচ দিয়ে কুয়া খুঁড়ব। আর স্বর্গে যাবেন আপনি ।' আমি বললাম, “তোমরা তশ কুয়া না খোড় আমি কিছুই দেব না। কুয়া হল না। গ্রামে প্রতি বৎসর আগুন লাগছে, তাদের "ীর মেয়েরা ৪/৫ মাইল দূরে বালি ভেঙে অসহ্য রেস্ত্ৰে জল নিয়ে আসে, ঘরে অতিথি এলে